https://ift.tt/eA8V8J
ঢাকা, ০৫ অক্টোবর- এবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিনের নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম যে ভান্ডারে রাখা হয়, সেটিই রক্ষার দায়িত্ব ছিল তার। কিন্তু তিনি সেগুলোর রক্ষক না হয়ে ভক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই ভান্ডারের জিনিসপত্র দুহাতে লোপাট করেছেন। গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এখন নামে-বেনামে বাড়ি, গাড়ি, জমি, প্লট, ফ্ল্যাটসহ সবই আছে তার। এসব সম্পদ তার বৈধ আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব সম্পদের তথ্য। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি। ফোনেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। দুদক সূত্র জানায়, বর্তমানে দুদক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। এই তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের মালিক হয়েছেন। রক্ষক থেকে ভক্ষক হয়েছেন তিনি। তালিকায় আলোচিত গাড়িচালক আবদুল মালেকের নামও রয়েছে। মালেকের পর এবার দুদক নাজিমের হাড়ির খবর বের করতে শুরু করেছে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সামান্য বেতনের ওই পদে চাকরি করে নাজিম উদ্দিন নিজের নামে ফ্ল্যাট কিনেছেন। স্ত্রী ফিরোজা বেগমের নামে জমি, প্লট ও গাড়ি কিনেছেন। ঠিকাদারি ব্যবসার জন্য কোম্পানি খুলেছেন। গাড়ি কিনেছেন ছেলের নামেও। দুই সন্তানকে উচ্চ বেতনে বেসরকারি নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন। ছোট সন্তানকেও বর্তমানে পড়ানো হচ্ছে নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড অসংখ্য। দুদকের একটি বিশেষ অনুসন্ধান টিমের সহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান এরই মধ্যে নাজিমের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন। এখন এসব সম্পদের উৎস খুঁজে বের করতে কাজ করছেন বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দুদক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে স্টোর অফিসার নাজিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী এখন পর্যন্ত নোটিশ গ্রহণ করেননি। তারা টালবাহানা করছেন। তাদের যে ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হচ্ছে, সেখান থেকে বলা হচ্ছে নাজিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী এখানে নেই। দুদকের কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে গিয়ে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হবে। সূত্র জানায়, নাজিম উদ্দিন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মতোই সিংহভাগ সম্পদ রেখেছেন স্ত্রী ফিরোজা বেগমের নামে। দুদকের অনুসন্ধানে ওসি প্রদীপের নামে কোনো সম্পদ পাওয়া যায়নি। সবই তার স্ত্রীর নামে। নাজিম উদ্দিনের নামে যে সম্পদ পাওয়া গেছে, সেটা স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদের তুলনায় খুবই সামান্য। নাজিম উদ্দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্টোর কিপারের দায়িত্বে আছেন। স্টোরের দায়িত্বে থেকে এর অর্থ সম্পদ লোপাট করেই তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে। নাজিম উদ্দিনের নামে সম্পদ: নাজিম উদ্দিনের নামে রাজধানীর উত্তরায় ১৩নং সেক্টরের ১৭নং সড়কের ২৭নং প্লটে রেডিয়েন্ট প্রপার্টিজের নির্মিত ভবনের ছয়তলায় এক হাজার ৬৬ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। দলিল মূল্যে এই ফ্ল্যাটের দাম ২২ লাখ টাকা দেখানো হলেও বাজারমূল্য আরও বেশি। ফ্ল্যাটটির দলিল করা হয়েছে ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর, যার দলিল নং-১৩৫৯৩। স্ত্রী ফিরোজা বেগমের নামে সম্পদ : স্ত্রী ফিরোজা বেগমের নামে টাঙ্গাইল জেলায় জমি ক্রয় করা হয়েছে। ওইসব জমির বিস্তারিত তথ্য বের করা হচ্ছে। মেডিকেল সামগ্রী কেনাকাটার জন্য আরএফএন এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি কোম্পানি খোলা হয়েছে স্ত্রী ফিরোজার নামে। গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রোডের হাজিবাগে এই কোম্পানির অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এই কোম্পানির মাধ্যমে সরকারি খাতের মেডিকেল সামগ্রী কেনাকাটা করা হচ্ছে। বর্তমানে জেলে থাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেরানী আবজালও তার স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি কোম্পানি খুলে মেডিকেল সামগ্রী কেনাকাটা করে সরকারি অর্থ লুটেছেন। নাজিমও একই পথে হাঁটছেন বলে দুদক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে। ফিরোজা বেগমের নামে রাজধানীর উত্তরার বোড়ইপাড়া মৌজায় চারটি প্লটে জমি কেনা হয়েছে। তার নামে দুটি মাইক্রো গাড়ি রয়েছে। একটি গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৫৪৪৮, অন্যটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-১৬-০৪৩২। সন্তানদের পেছনে খরচ: নাজিম উদ্দিন তার তিন সন্তানকে বেসরকারি নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার এক মেয়ে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে লেখাপড়া করেছেন। পরে তিনি শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পড়াশোনা শেষ করেছেন। এক ছেলে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া শেষ করেছেন। ছোট ছেলেও উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে লেখাপড়া করেছেন। বর্তমানে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশে (এআইইউবি) ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া করছেন। আরও পড়ুন:কুরিয়ার সার্ভিসের নামে প্রতারণা, পাঁচ রয়েল চিটার গ্রেপ্তার বিদেশ ভ্রমণ: দুদক নাজিম উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের নথিপত্র ঘেঁটে তাদের সপরিবারে বহুবার বিদেশ ভ্রমণের তথ্য পেয়েছে। বারবার বিদেশ ভ্রমণে অর্থ জোগান কোথা থেকে এলো- এই তথ্যও অনুসন্ধান করছে দুদক। ছেলের নামে গাড়ি : ছেলেকে কিনে দেওয়া হয়েছে একটি প্রাইভেটকার। গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-২৮-২৯২৫। ব্যাংক হিসাব: নাজিম উদ্দিনের নামে ট্রাস্ট ব্যাংক, স্ত্রী ফিরোজা বেগমের নামে প্রাইম ও ব্র্যাক ব্যাংকে হিসাব রয়েছে। তাদের ওইসব হিসাবে কত টাকার লেনদেন হয়েছে, কত টাকা জমা আছে- সেই তথ্য অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি। ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। অধিদপ্তরের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ২০ জন আছেন এই তালিকায়। তারা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মজিবুল হক মুন্সি, তার স্ত্রী মিসেস রিফাত আক্তার, ইপিআই শাখার ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া, তার স্ত্রী মিসেস খাদিজা আক্তার, আলোচিত দুর্নীতিবাজ ও অধিদপ্তরের গাড়িচালক মো. আবদুল মালেক ও তার স্ত্রী মিসেস নার্গিস বেগম, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান ও তার স্ত্রী মিসেস বিলকিচ রহমান, ওবাইদুর রহমানের আরেক স্ত্রী ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের স্টাফ নার্স মোসা. রেহেনা আক্তার। এ ছাড়া অন্যরা হলেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ইমদাদুল হক, তার স্ত্রী মোছা. উম্মে রুমান ফেন্সী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. মাহমুদুজ্জামান, তার স্ত্রী মোছা. সাবিনা ইয়াছমিন, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন, তার স্ত্রী মিসেস ফিরোজা বেগম, হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার অফিস সহকারী কামরুল হাসান, তার স্ত্রী ডা. উম্মে হাবিবা, গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের স্টেনোগ্রাফার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম, বরিশাল বিভাগের পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান (নন মেডিকেল) বর্তমানে সহকারী প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মীর রায়হান আলী ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন। সূত্রঃ সমকাল আডি/ ০৫ অক্টোবর
https://ift.tt/3cYbS0B
0 Comments