হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না বৃদ্ধ

https://ift.tt/eA8V8J
কক্সবাজার, ০৩ জুন - বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক বৃদ্ধকে টমটম থেকে নামিয়ে পাশের ধানক্ষেতে নিয়ে জামা-কাপড় ছিঁড়ে উলঙ্গ করে নির্যাতন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ভিডিওটি ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে সবার। ঘটনার সময় হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি ওই বৃদ্ধ। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই বৃদ্ধের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ করেছেন এলাকার কয়েকজন সন্ত্রাসী। গত ২৪ মে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ায় ন্যক্কারজনক এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা আনছুর আলমের নেতৃত্বে একদল যুবক এ ঘটনা ঘটান। ভুক্তভোগী নুরুল আলম (৭২) উপজেলার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ার বাসিন্দা। অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা আনছুর আলম একই ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এবং মৃত মনির উল্লাহর ছেলে। স্থানীয়রা জানায়, ২৪ মে বিকেলে বাজার থেকে ফেরার পথে বৃদ্ধ নুরুল আলমকে টমটম থেকে নামিয়ে পাশের ধানক্ষেতে নিয়ে যান এলাকার কয়েকজন যুবক। এ সময় নুরুল আলমকে কিল-ঘুষি মারা হয়। পরে তার পরনের লুঙ্গি, গেঞ্জি টেনে ছিঁড়ে ফেলেন যুবলীগ নেতা আনছুর আলম। একই সঙ্গে তাকে গালিগালাজ করা হয়। কয়েকজন যুবক এসব দৃশ্য মোবাইলের ক্যামরায় ধারণ করেন। বার বার হাতজোড় করলেও বৃদ্ধকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ। এ ঘটনার পর ৩১ মে বৃদ্ধ নুরুল আলমের ছেলে আশরাফ হোসাইন চকরিয়া থানায় মামলার জন্য এজাহার দেন। এজাহারে ওই এলাকার মৃত মনির উল্লাহর ছেলে বদিউল আলম, আনছুর আলম, শাহ আলম, শাহ আলমের স্ত্রী আরেজ খাতুন, বদিউল আলমের ছেলে মিজানুর রহমান, আবদুল জাব্বারের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন, জয়নাল আবেদিন এবং মনজুর আলমের ছেলে মো. রুবেলকে অভিযুক্ত করা হয়। এজাহারে আশরাফ হোসাইন উল্লেখ করেছেন, ২৪ মে আমার বৃদ্ধ বাবা নুরুল আলম ঈদের বাজার করে ঢেমুশিয়া স্টেশন থেকে টমটমযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে যুবলীগ নেতা আনছুর আলমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী টমটম থেকে আমার বাবাকে নামিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে পরনের লুঙ্গি, গেঞ্জি ছিঁড়ে উলঙ্গ করে ফেলেন। পাশাপাশি তাকে মারধর ও গালিগালাজ করেন তারা। গ্রামের কয়েকজন যুবক এ দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন। এ সময় আমার বাবা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলেও কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। খবর পেয়ে আমার ছোট ভাই সিএনজিচালক সালাহউদ্দিন স্থানীয় লোকজনসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবাকে উদ্ধার করে। এরপর বাবাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। আশরাফ হোসাইন এজাহারে আরও উল্লেখ করেছেন, ঘটনার সময় আমার বাবার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ও পকেটে থাকা সাড়ে সাত হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। আশরাফ হোসাইন বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জেরে আমার বাবার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছেন সন্ত্রাসী আনছুর আলম। স্থানীয় যুবলীগ নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এমন কোনো অপকর্ম নেই যা সে করে না। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বলেন, তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃদ্ধ নুরুল আলমের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। তিনি এলাকার বয়োবৃদ্ধ মানুষ ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা। সবাই তাকে সম্মান করে। এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি আমাকে জানানোর পর থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। কি কারণে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বিষয়টি জানতে যুবলীগ নেতা আনছুর আলমের মোবাইলে অনেক বার কল দিলেও রিসিভ করেননি। চকরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছেলে আশরাফ হোসাইন মামলার জন্য থানায় এজাহার দিয়েছেন। তবে এজাহারটি এখনও আমার হাতে পৌঁছেনি। এজাহারটি হাতে এলে তদন্ত করে খুব দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মোহাম্মদ মতিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টা আমি ফেসুবকে দেখেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে এবং যারা ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়েছে; তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ০৩ জুন
https://ift.tt/2Mlrhvz

Post a Comment

0 Comments