https://ift.tt/eA8V8J
ঢাকা, ২৭ আগস্ট - কোভিড-১৯ মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকার নির্দেশ তথা লকডাউনের কারণে দেশের নিম্ন আয়ের পরিবার বিশেষত নারীরা অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও হুমকিতে পড়েছে। বুধবার (২৬ আগস্ট) আইসিডিডিআরবি পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইসিডিডিআরবির গবেষক দল এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইন্সটিটিউট, অস্ট্রেলিয়ার করা এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বাংলাদেশের গ্রামীণ নারী ও তাদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ এবং এর কারণে আরোপিত ঘরে থাকার নির্দেশের প্রভাব দেখেছেন তারা। এতে দেখা গেছে, মার্চের শেষ থেকে মে পর্যন্ত প্রায় দুই মাস ঘরে থাকার কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় থাকা পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়েছে। একইসঙ্গে নারীদের ওপর স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রায় দুই মাস ঘরে থাকার নির্দেশ জারি হয়। নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে চলমান গবেষণা নেটওয়ার্কের আওতায় গবেষক দল ২ হাজার ৪২৪ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক নির্যাতনের ওপর লকডাউনের প্রভাব দেখেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন হ্রাস পেয়েছে এবং ৯১ শতাংশ নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করছেন। প্রকৃতপক্ষে ৪৭ শতাংশ পরিবারের আয় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার নিচে (১৬০ টাকা অথবা ১.৯০ ইউএস ডলার/প্রতিজন/ প্রতিদিন) চলে গিয়েছিল। অধিকন্তু, পরিবারগুলোর ৭০ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৫ শতাংশ খাদ্য সংকট, অভুক্ত অবস্থায় অথবা কোনও এক বেলা অনাহারে ছিলেন । মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর লকডাউনের বিশেষ প্রভাব দেখা গেছে। মহিলাদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে এবং ৬৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন তাদের দুশ্চিন্তার প্রবণতা বেড়ে গেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো মহিলাদের মধ্যে যারা স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন; তাঁদের অর্ধেকের বেশি লকডাউনের সময় থেকে তা বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। আরও পড়ুন: বাংলাদেশও সব দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন পাবে ডা. জেনা দেরাকসানী হামাদানি, ইমিরেটাস বিজ্ঞানী, মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ, আইসিডিডিআর, বি এবং এই গবেষণার প্রধান গবেষক বলেন, আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ মহিলাদের এবং তাদের পরিবারের ওপর কোভিড -১৯ মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকার নির্দেশাবলীর প্রভাব নিরূপণ করা। এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্য উন্নয়নশীল দেশের নীতি নির্ধারকদের জন্য গরিব ও নারী-বান্ধব লকডাউন বা ঘরে থাকার নির্দেশ বাস্তবায়ন করার উপযোগী কার্যক্রম প্রণয়নে সহায়তা করবে। ডা. জেনা বলেন, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি নির্দেশ করে যে তারা খাদ্য সংস্থানের জন্য অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। এই গবেষণা মহামারির ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ও পুষ্টির বিপর্যয় নির্ণয়ে একটি মডেল তৈরিতে সহায়ক হবে। ওয়াল্টার এলিজা হল ইন্সটিটিউট-এর সহযোগী অধ্যাপক এবং বুধবার ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথনামক জার্নালে প্রকাশিত এই নিবন্ধের এক সহ-লেখক ডা. শান্ত রায়ান পারিচা বলেন, লকডাউনের পূর্বে এবং লকডাউন থাকা অবস্থায় পরিবারগুলো কিভাবে চলছিল তা তুলনা করে আমরা দেখতে পেয়েছি, তারা লকডাউনের সময় অর্থনৈতিক এবং মানসিক দিক দিয়ে বিশেষ চাপের মধ্যে ছিলেন। গবেষণাটি, শুধুমাত্র নিম্ন আয়ের পরিবার ছাড়াও যেসব পরিবার লকডাউন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাদের সার্বিক কল্যাণ ও সব ধরণের আর্থিক সহযোগীতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। মূলত, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সামাজিক সাহায্য-সহযোগিতা এবং লকডাউনের সময় পারিবারিক নির্যাতন রোধকল্পে গৃহীত কার্যক্রমসমূহ যাতে সহজে ব্যবহার করা যায় তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। গবেষণাটির অর্থায়ন করেছে অষ্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল। এটি পরিচালিত হয়েছে দোহার্টি ইন্সটিটিউট ও মোনাস ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার যৌথ অংশীদারিত্বে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন এন এইচ, ২৭ আগস্ট
https://ift.tt/2YUo8tp
0 Comments