https://ift.tt/eA8V8J
দিসপুর, ২২ জুলাই- তিনি যতক্ষণ নিজের মুখ বন্ধ রাখেন, ততক্ষণই মঙ্গল। নিজের জন্য শুধু নয়, দলের জন্যও। কারণ, তিনি নিজে সমালোচিত হওয়ার পাশাপাশি দলকেও একাধিক বার বিড়ম্বনায় ফেলেছেন, বেঁফাস মন্তব্য করে। একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রমাণ করার পাশাপাশি ব্যক্তি হিসেবেও হাস্যস্পদ করে তুলেছেন। তাঁর বিতর্কের ভাণ্ডার শেষ হবে না। ত্রিপুরার মানুষও এতদিনে এটা জেনে গিয়েছেন বিতর্ক ও বিপ্লব দেব একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দু-দিন আগেই ঠাট্টার ছলে পঞ্জাবি ও জাঠদের নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক বাধিয়েছেন। যার জন্য পরে দুঃখ প্রকাশও করতে হয় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে। সেই বিতর্কের রেশ মেলানোর আগেই ফের বিতর্কের কেন্দ্রে বিপ্লব দেব। এ বার দলের প্রতি আনুগত্য ও ক্ষমতার আস্ফালন দেখাতে গিয়ে বিতর্ক উস্কে দিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার এক অনুষ্ঠানে গিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি যে রাজনৈতিক দলে রয়েছেন, সেই দলই আমৃত্যু রাজ্যে ক্ষমতায় থাকবে। এখানেই শেষ নয়। এর পর নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন বিপ্লব দেব। ফেসবুকে তিনি পোস্ট করেন: আমি যত দিন জীবিত থাকব, তত দিন যে দলে রয়েছি, এখানে সেই দলই সরকারে থাকবে। আমিও থাকব, ত্রিপুরার জন্যে কাজ করে যাব। সেই সঙ্গেই যোগ করেন, আর যদি মৃত্যু হয়, তখন স্মৃতিবনের গাছ হয়ে ত্রিপুরার মানুষকে অক্সিজেন দিয়ে যাব। কারণ ৩৭ লক্ষ ত্রিপুরাবাসী এই অল্প সময়ে আমাকে যা দিয়েছেন, তা আমাকে ফেরত দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যদি বিরোধীদের হাতে বল তুলে দেন, তাঁরাই বা ছেড়ে কথা বলবেন কেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, এই ধরনের মন্তব্য রাজতন্ত্রের প্রতিফলন। মুখ্যমন্ত্রী যত দিন বাঁচবেন, তত দিন যেন রাজ্যে নির্বাচনের বালাই থাকবে না। তিনিই রাজত্ব চালাবেন! ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতেও কংগ্রেস ছাড়েনি। কংগ্রেস নেতাদের পরামর্শ, বিপ্লববাবুর কোনও প্রতিশ্রুতিই তো খাটে না। তিনি বরং দেহ দান করুন। তাতে মেডিক্যাল কলেজে পাঠরত পড়ুয়াদের কাজে লাগবে। দু-দিন আগেই আগরতলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাঠদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে, পরে চাপে পড়ে ক্ষমা চাইতে হয় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে। জাতিবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে, ঘরে-বাইরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন বিপ্লব দেব। হরিয়ানার জাঠদের সঙ্গে বাঙালির তুলনা টেনে তিনি বলেন, জাঠদের শারীরিক গঠন মজবুত হলেও তাঁদের বুদ্ধি কম। তাঁদের সঙ্গে শারীরিক ভাবে পেরে ওঠা না-গেলেও, বুদ্ধি দিয়ে হারানো সহজ। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে বাঙালিদের পরিচয় তাঁদের বুদ্ধির জন্য, মেধার জন্য। বাঙালিদের মেধাকে কেউ অতিক্রম করতে পারে না। বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যকে হাতিয়ার করে, ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে বিরোধী দল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের মধ্যে থেকে ৫০ সেকেন্ডের বিতর্কিত অংশটি ট্যুইট করে, তীব্র নিন্দা করেন। তিনি লেখেন, বিপ্লব দেবের এই মন্তব্যই পরিচয় দিচ্ছে বিজেপির মানসিকতা ঠিক কেমন। নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে সুরজেওয়ালা লেখেন, খুবই লজ্জাজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। ত্রিপুরায় বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী, বিপ্লব দেব যে ভাবে পঞ্জাবের শিখ ভাই এবং হরিয়ানার জাঠ সম্প্রদায়ের নিন্দা করেছেন, তা অত্যন্ত নিচু মানসিকতার পরিচয় দেয়।এর পরই যোগ করেন, এটাই আসলে বিজেপির আসল মানসিকতা। খট্টরজি এবং দুষ্মন্ত চৌতলা এখন চুপ কেন? বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে উল্লেখ করে রণদীপ সুরজেওয়ালা লেখেন, মোদিজি এবং নড্ডাজি (বিজেপি সভাপতি) কোথায় আছেন? ক্ষমা চাইতে বলুন, ব্যবস্থা নিন। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে ক্ষমা চেয়ে নেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। পরপর তিনটে ট্যুইটে তিনি তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। মঙ্গলবার হিন্দিতে তিনটি ট্যুইট করেন বিপ্লব। লেখেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ভারতের অগ্রগতিতে পঞ্জাবি এবং জাঠ সম্প্রদায়ের অবদানকে আমি সর্বদাই প্রণাম জানাই। আমার অনেক অভিন্ন হৃদয় বন্ধুও ওই দুই সম্প্রদায়ের। তাঁদের নিয়ে জাতিবিদ্বেষী মন্তব্য করার কথা ভাবতেও পারি না। যদি আমার বয়ানে কারও ভাবাবেগে আঘাত লেগে থাকে, তা হলে তার জন্যে আমি ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। সূত্র: এইসময় আর/০৮:১৪/২২ জুলাই
https://ift.tt/3eRTqpL
0 Comments