দেশে বিদেশে টিভি চ্যানেলে এবার আসছেন পূর্ণদাস বাউল ও ফরিদা পারভীন

https://ift.tt/eA8V8J
টরন্টো, ২৯ জুন- আগামীকাল ৩০ জুন মঙ্গলবার কানাডার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা টিভি চ্যানেল দেশে বিদেশের জনপ্রিয় লাইভ অনুষ্ঠান আড্ডা উইথ মিন্টোতে অংশগ্রহণ করছেন উপমহাদেশের দুই জীবন্ত কিংবদন্তী বাউল সম্রাট পদ্মশ্রী পূর্ণদাস ও লালনগীতি সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন। সাথে রয়েছেন বাউলপুত্র ভগবান দাস বাউল ও প্রখ্যাত বংশীবাদক গাজী আব্দুল হাকিম। সঞ্চালনায় থাকছেন দেশে বিদেশে সম্পাদক নজরুল মিন্টো। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে রাত ঠিক ১০টায় (পূর্বাঞ্চলীয় সময়)। বাংলাদেশ সময় ১ জুলাই বুধবার সকাল ৮টা এবং কলকাতা সময় বুধবার সকাল ৭:৩০ মিনিটে। দেশে বিদেশে টিভি চ্যানেল ছাড়াও অনুষ্ঠানটি একই সাথে ফেসবুক (https://ift.tt/2Sz1h1v) এবং ইউটিউব (https://www.youtube.com/deshebideshe) চ্যানেলেও সম্প্রচারিত হবে। এক নজরে পদ্মশ্রী পূর্ণদাস বাউল পূর্ণদাস বাউল ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ ব্রিটিশ-ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত রামপুরহাটের সন্নিকটে একচক্কা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নবনীদাস বাউল। ছোটবেলা থেকেই পূর্ণদাস পিতার সাথে বাংলার বিভিন্ন স্থানে যাত্রা করেন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মন্বন্তরের সময় দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারকে আহার জোগাড় করতে তিনি রেলস্টেশন ও প্ল্যাটফর্মে গান গেয়ে রোজগার করেন। এই সময় সীতারাম ওঙ্কারণাথ নামে এক সাধকের প্রেরণায় পূর্ণদাস বাংলার বাইরেও বাউল গান গাইতে বের হন। তিনি মাত্র নয় বছর বয়সে বাউল গান গেয়ে জয়পুরে এক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয় করেন। কৈশোরে তিনি কলকাতা শহরে রংমহল থিয়েটার এবং বঙ্গসংস্কৃতির মেলায় গান গেয়েছিলেন। পিতার সঙ্গে যুগ্মভাবে নির্মিত তার গানের রেকর্ডিং এই সময় প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়। ১৯৬০ সালে পূর্ণদাস বাউল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কো শহরের এক গানের অনুষ্ঠানে বব ডিলানের পূর্বতন ম্যানেজার অ্যালবার্ট গ্রসম্যান কর্তৃক নিমন্ত্রিত হন। তারপর তিনি আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে বিভিন্ন সঙ্গীত অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরপর তিনি বব ডিলানের বাসস্থান বিয়ার্সভিলায় পরিভ্রমণ করেন, যেখানে ডিলানের সঙ্গে পূর্ণদাসের বেশ কিছু গান রেকর্ড করা হয়। পরে ফ্রান্সর নাইস শহরে মাইক জ্যাগারের ম্যানেজার পূর্ণদাসকে রোলিং স্টোন স্টুডিওতে গান রেকর্ডিং করার নিমন্ত্রণ করেন। পূর্ণদাস পরবর্তী বছরগুলিতে পৃথিবীর বহু দেশে বাউল গান গেয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। হোয়েন দ্য নাইট কাম্স ফলিং ফ্রম দ্য স্কাই গানে বব ডিলান যা লিখেছেন, তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, দেখেছি হাজার অন্ধকার জয়ী মানুষ, সামান্য অর্থের মোহে কালোয় ডুবে যায়; কাছে কাছে থাকো এই ক্রান্তিলগ্নে, আমার জন্য ভেবো না। আমি ঠিক থাকব তখন, যখন আকাশ থেকে রাত্রি নেমে আসবে, নিভৃতে। এই গান আসলে বন্ধুত্বের, ভালোবাসার, উদযাপনের। এই বব ডিলানকেই ট্রিবিউট জানিয়েছেন পূর্ণদাস বাউল। ২০১৩ সালে ডিলানের মিস্টার ট্যাম্বারিন ম্যান বাংলায় তর্জমা করলেন। উপহার দিলেন বন্ধুকে। শুধুই কি ডিলান! বাউল গানের জন্য পূর্ণদাস পৌঁছে যান মিক জ্যাগার, জর্জ হ্যারিসন, মাইকেল জ্যাকসন, জোয়ান বোয়েজের কাছে। পূর্ণদাস হলেন প্রথম বাউল, যিনি বাংলার বাউল গানকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বের মঞ্চে। বিদেশ তাঁর হাত ধরেই চিনতে শুরু করছে বাউল-তত্ত্ব আর ভাবরস। ১৯৫৪ সালে অল ইন্ডিয়ার রেডিও থেকে ডাক এল। প্রথম বাউল হিসাবে গান গাইলেন সেখানে। এখন এই ফোক ফিউশনের যুগেও মণিমুক্তোরা হারিয়ে যান না। তাঁদের অমলিন সৃষ্টি আজও তাঁদের বাঁচিয়ে রাখে। যেমন সকল সংগীতপ্রেমী এবং বাউলদের মনে উজ্জ্বল হয়ে আছেন পদ্মশ্রী পূর্ণদাস বাউল। গায়কি থেকে পোশাক, সবেতেই নিজেকে ভেঙেছেন-গড়েছেন। সময়কে সঙ্গী করে প্রাচীনমনস্ক না হয়ে নিজেকে স্বতন্ত্র করে রাখার নামই শিল্প। তাঁকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, এত পুরস্কার ও সম্মান পাওয়ার পর আপনার কাছে শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি কী! মৃদু হেসে তিনি উত্তর দেবেন, মানুষের ভালোবাসা। এক নজরে লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন বাংলাদেশে লালন সঙ্গীতের কথা উঠলেই যার নাম সবার আগে আসে তিনি হলেন ফরিদা পারভীন। নজরুলসঙ্গীত ও আধুনিক গান দিয়ে তাঁর সঙ্গীতের যাত্রা শুরু হলেও ফরিদা পারভীন ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন ফকির লালন শাহের গান গেয়ে। লালনের গানের কথা ও সুর দিয়ে গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষী মানুষের মন ছুঁয়েছেন ফরিদা পারভীন। বাংলাদেশের আপামর-সাধারণের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই লালন সঙ্গীত এবং ফরিদা পারভীন পরস্পর পরিপূরক এবং অবিচ্ছিন্ন দুটি নাম। লালন সাঁইজির গানের প্রসঙ্গ উঠলেই বাঙালীর মন-কানে প্রথমেই যাঁর কন্ঠস্বর ও সুর বেজে ওঠে, তা নিশ্চিতভাবেই ফরিদা পারভীনের। দীর্ঘদিন তিনি দূর কুষ্টিয়া শহরে বসে লালন সঙ্গীতের চর্চা করেছেন এবং সেখান থেকেই তাঁর প্রতিষ্ঠা। দূর মফস্বল শহরে বাস করে লালন সঙ্গীতের মতো একটি বিশেষ সঙ্গীতের ক্ষেত্রে একক গুরুত্ব প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে ফরিদা পারভীন ছাড়া আর কারো নেই। কুষ্টিয়াতে অবস্থানকালেই তিনি লালন সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক এবং অনন্ত প্রেম ছবিতে নিন্দার কাঁটা গানটি গেয়ে ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়ঃ লালন সঙ্গীতের এই অতুলনীয় ও অদ্বিতীয় কন্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর নাটোর জেলার সিংড়া থানার শাঔঁল গ্রামে। শাঔঁল হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সুন্দর একটা গ্রাম কলম-এর অংশ। কলম গ্রামের মতো এত সুন্দর গ্রাম আজও নাকি তামাম উত্তরবঙ্গে নেই। এ প্রসঙ্গে ফরিদা পারভীন ওই অঞ্চলে প্রচলিত একটা ছন্দ-প্রবাদের উদ্ধৃতি দেন- বিল দেখতে চলন। গ্রাম দেখতে কলম। সেই সুন্দর গ্রামাঞ্চলে তাঁর জন্ম। শিক্ষা জীবন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাঃ ফরিদা পারভীনের স্কুল জীবন কেটেছে বিভিন্ন শহরে। তবে তাঁর স্কুল জীবনের সূচনা হয়েছিল মাগুরায়। তারপর একে একে কুষ্টিয়া গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল, কুষ্টিয়ার মীর মোশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় এবং মেহেরপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন মীর মোশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় থেকে। এরপর কলেজ জীবনে তিনি কুষ্টিয়াতে পড়ালেখা করেছেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কুষ্টিয়া গার্লস কলেজ থেকে এইচ.এসসি. পাশ করেন এবং একই কলেজ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৬-৭৯ খ্রিস্টাব্দে অনার্স পাশ করেন। ফরিদা পারভীনের কর্মজীবন সঙ্গীতময়। শুধু লালনের গান নয়, তিনি একাধারে গেয়েছেন আধুনিক এবং দেশাত্মবোধক গান। ফরিদা পারভীনের গাওয়া আধুনিক, দেশাত্মবোধক কিংবা লালন সাঁইয়ের গান সমান ভাবেই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, একুশে উদযাপনসহ যে কোনো জাতীয় দিবস পালনের সন্ধিক্ষণ এলে এদেশের সর্বত্র এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা-সুরমা নদীর তটে গানটি অবধারিতভাবেই শোনা যায়। আবার আধুনিক গানের প্রসঙ্গ উঠলে এদেশের মানুষ এক বাক্যে স্মরণে আনে ফরিদার গাওয়া- তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম এবং নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে প্রেমের কী সাধ আছে বলো গান দুটিকে। সম্মানওস্বীকৃতি: ফরিদা পারভীন লালন সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক পান। এর বাইরে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র অন্ধ প্রেম-এ সঙ্গীত পরিবেশন করে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
https://ift.tt/2BS1WHi

Post a Comment

0 Comments