বাংলাদেশে আইএস-এর নতুন আমির ঘোষণা!

https://ift.tt/eA8V8J
ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর- বাংলাদেশে আবারও কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর একজন নতুন প্রধান নির্বাচিত করা হয়েছে বলে একটি খবর বেরিয়েছে। ভারতের জি নিউজে কাজ করেন এমন একজন সাংবাদিক এক টুইটে এই খবরটি দিয়েছেন। পুজা মেহতা নামের ওই সাংবাদিক জি নিউজের সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ বিষয়ক একজন সংবাদদাতা। তার দাবি, আইএস বা আইসিস-পন্থী একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে বাংলাদেশে সংগঠনের নতুন আমির নিয়োগের বিষয়টি ঘোষণা করা হয়েছে। পুজা মেহতার টুইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের নতুন আমিরের নাম আবুল আব্বাস আল বাঙ্গালি। কিন্তু আন্তর্জাতিক জিহাদি সংগঠনগুলোর তৎপরতার খোঁজ-খবর রাখেন এমন বিশেষজ্ঞরা এই দাবির ব্যাপারে গুরুতর সংশয় প্রকাশ করছেন। সুইডেনে অবস্থানরত বাংলাদেশি লেখক এবং সাংবাদিক তাসনীম খলিল বলছেন, এ নিয়ে গত কয়েক বছরে এমন তিন জনের নাম শোনা গেল, যাদেরকে বাংলাদেশে আইসিস এর নতুন প্রধান বলে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এসব দাবির কোনটিরই সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে আইসিস নিজেই বিবৃতি দিয়ে এসব দাবির প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারতীয় সাংবাদিকের দাবি নিয়ে সংশয় কেন? তাসনীম খলিল বলছেন, ভারতীয় সাংবাদিক পুজা মেহতার টুইটে যে দাবি করা হয়েছে, তা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাসনীম খলিল বলেন, আইএসের অফিশিয়াল কিছু টেলিগ্রাম চ্যানেল আগে ছিল। তাদের মিডিয়া ডিপার্টমেন্ট যারা চালাতো, তারাই এগুলো পরিচালনা করতো। আমিও সেই চ্যানেলগুলোতে সাবস্ক্রাইব করতাম। তার মতে, বাংলাদেশের ব্যাপারে খবর দেওয়ার যে অফিশিয়াল চ্যানেলগুলো আইএসের ছিল, সেগুলো এখন আর নেই। কাজেই এই টুইটে প্রো-আইসিস বাংলাদেশ টেলিগ্রাম চ্যানেলের বরাতে যা বলা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর। আর আইএসের এখনও যে গুটিকয়েক চ্যানেল আছে, সেগুলোতে কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরণের কোনও খবর দেখিনি যে, তারা নতুন কোন আমির বাংলাদেশে নিয়োগ করেছে। তাসনীম খলিলের মতে, বাংলাদেশে আইএসের সাংগঠনিক অবস্থান এখন নেই বললেই চলে। কাজেই যে সংগঠনই নেই, সেই সংগঠনের আমির নিযুক্ত করার বিষয়টি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আইএসের আমির নিযুক্ত করারও কয়েকটা প্রক্রিয়া আছে। যে কেউ হঠাৎ করে টুইটারে বলে দিলেই কিন্তু নতুন আমির নিযুক্ত হয়ে যায় না। এই জন্য সবকিছু মিলিয়ে আমি মনে করি এই দাবিটা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়, হাস্যকরও বটে। তাসনীম খলিল বলেন, যেহেতু আইসিসের নিজস্ব যোগাযোগের চ্যানেলগুলোও এখন নেই, তাই এ রকম কোনও দাবির সত্যতা যাচাই করার সুযোগও নেই। ছদ্মনাম নিয়ে প্রশ্ন তাসনীম খলিল বাংলাদেশে আইসিসের কথিত নতুন আমিরের ছদ্মনাম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, পুজা মেহতার এই টুইটে বেশ কিছু ভুল আছে। এতে নতুন আইসিস আমিরের নাম আবুল আব্বাস আল বাঙ্গালি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আইএস সাধারণত তাদের নেতা বা যোদ্ধাদের যে নাম প্রকাশ্যে প্রচার করে, সেটি আসলে ছদ্মনাম বা তাদের ভাষায় কুনিয়া। আইএসের এর কুনিয়া সাধারণত এ রকম হয় না। এই কুনিয়ার দুটি অংশ থাকে। একটি অংশে মূলত পারিবারিক সম্পর্কের ইঙ্গিত থাকে, আরেকটিতে থাকে তিনি কোন দেশ বা কোন অঞ্চলের মানুষ, সেটির ইঙ্গিত। তাসনীম খলিল বলেন, আবুল আব্বাস আল বাঙ্গালি নামটি যদি আইএসের দেওয়া নাম হতো, এটি আসলে হতো আবু আব্বাস আল বাঙ্গালি। আবু আব্বাস মানে আব্বাসের পিতা, আর আল-বাঙ্গালি মানে বাংলাদেশি বা বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশে আইএসের প্রথম ঘোষিত আমির ছিলেন সাইফুল্লাহ ওজাকি, যার কুনিয়া বা ছদ্মনাম ছিল আবু ইব্রাহীম আল হানিফ। সাইফুল্লাহ ওজাকির একটি ছোট ছেলে ছিল, যার নাম ছিল ইব্রাহীম। তার ভিত্তিতেই এই কুনিয়া। বাংলাদেশে আইএসের নেতৃত্ব বাংলাদেশে আইএসের এখনও পর্যন্ত স্বীকৃত আমির একজনই ছিল। তার নাম ছিল আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তার প্রকৃত নাম ছিল সাজিথ দেবনাথ। ধর্মান্তরিত হয়ে জাপানে অবস্থানকালে তার নতুন নাম হয় সাইফুল্লাহ ওজাকি। তাকেই বাংলাদেশের গুলশানে হোলি আর্টিজানে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে মনে করা হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে খবর আসে যে, ইরাকে কুর্দি বাহিনীর হাতে সাইফুল্লাহ ওজাকি ধরা পড়েছেন। তাসনীম খলিল জানান, ওজাকির পর বাংলাদেশে আরও দুজন আইএসের আমির হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছিল। এদের একজনের নাম বলা হয়েছিল আবু শফিক আল বাঙ্গালি (২০১৭)। অপরজনের নাম আবু মুহাম্মদ আল বাঙ্গালি। কিন্তু পরে এই দুটি দাবির কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি। আরও পড়ুন-সিনহা হত্যার তদন্ত প্রতিবেদনে যা আছে বাকিয়া মিডিয়া স্ট্রাইক নামে বাংলাদেশে আইএসের যে কমিউনিকেশন চ্যানেল ছিল, তারা নিজেরাই এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, এগুলো আইএসের শত্রু এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কাজ করা গুপ্তচরদের প্রচারণা। হানিপট অপারেশন আইএসের নতুন আমির নিয়োগের এ রকম দাবি যদি ভুয়া হয়ে থাকে, সেই প্রচারণার উদ্দেশ্য কী হতে পারে? তাসনীম খলিল বলেন, বিভিন্ন দেশে যেসব নিরাপত্তা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থা কাউন্টার টেররিজম-এর কাজে যুক্ত, তারা নিজেরাই অনেক সময় ছদ্ম প্রচারণা চালিয়ে সম্ভাব্য জঙ্গিদের ফাঁদে আটকানোর চেষ্টা করে। এ ধরণের তৎপরতাকে বলা হয় হানিপট অপারেশন, অর্থাৎ মধুর লোভ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা। বিভিন্ন নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাইবার সেলগুলো এ রকম তৎপরতা চালিয়ে থাকে। এটা সে রকম কোনও অপারেশনের অংশ হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা সম্পর্কে যে অনেক মিথ্যে প্রচারণা চালানো হয়, তার একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি। তাসনীম খলিল বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে খবর বেরিয়েছিল যে, ঢাকার একটি পুলিশ ফাড়িতে হামলায় যুক্ত থাকার দাবি করেছে আইসিস। সাইট ইন্টেলিজেন্স থেকে অনেকেই এই খবরটি প্রচার করলো। অথচ এই ফাঁড়িতে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে যে আইএসের কোনও সম্পর্ক ছিল না, সেটা বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম পুলিশের তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মূলত পুলিশের চক্রান্তটি ভন্ডুল হয়ে যাওয়ার পর আইএসের নামে এই মিথ্যে দাবি ছড়ানো হয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা এমএ/ ০৮ সেপ্টেম্বর
https://ift.tt/35mfcRc

Post a Comment

0 Comments