https://ift.tt/eA8V8J
নিয়মিত আমল করি জান্নাতে আবাস গড়ি। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য সহজ ৩টি আমলের ঘোষণা দিয়েছেন। যে আমলের পুরস্কার শুধুই জান্নাত। এ আমলগুলো আমাদের জন্য একেবারেই সহজ। আল্লাহর তাআলা মুমিন মুসলমানের জন্য প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় কর ফরজ। নামাজি ব্যক্তির জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে ওজু করা। আর মুয়াজ্জিনও প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদ থেকে নামাজের আহ্বান করে থাকে। এ তিনটি ইবাদতের একটির সঙ্গে অন্যটির কী সুন্দর মিল! মুমিন মুসলমান আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে নামাজের জন্য ওজু করে। ওজু করে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে নামাজ আদায় করে। এ ৩টি ইবাদতের একটি বিশেষ পুরস্কার হচ্ছে চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ। এ আমলগুলো সম্পর্কে হাদিসে আলাদা আলাদা বর্ণনা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আজানের উত্তর দেয়া: নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুয়াজ্জিন আজান দিয়ে থাকে। মুয়াজ্জিনের আজানের সময় মনোযোগসহ তা শোনা এবং উত্তর দেয়া ফরজে কেফায়া। সুতরাং মনোযোগসহকারে আজান শুনার সময় এর উত্তর দেয়া রয়েছে জান্নাতের ঘোষণা। হাদিসে এসেছে- হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি মুয়াজ্জিনের- - আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার-এর জাওয়াবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে এবং - আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর জওয়াবে আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে এবং - আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ এর জওয়াবে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলে, অতপর - হাইয়্যা আলাস্-সলাহ-এর জওয়াবে যদি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে, তারপর - হাইয়্যা আলাল-ফালাহ-এর জওয়াবে যদি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে, - অতপর যদি আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার এর জওয়াবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এবং - লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ-এর জওয়াবে লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ, মুসলিম) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে আজান দিলেন। হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন (আজান থেকে) থামলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এর (হজরত বেলালের) মতো বলবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে। (নাসাঈ, মেশকাত) ওজুর পর কালেমা শাহাদাত পড়া: নামাজের জন্য ওজু শর্ত। ওজু ছাড়া নামাজ হবে না। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ওজু করতে নির্দেশ করেছেন। কুরআনুল কারিমের ওজুর ফরজ ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন- হে ঈমাদারগণ! যখন তোমার নামাজে দাঁড়াতে চাও, তাহলে (প্রথমে) তোমরা পুরো মুখমণ্ডল ধুয়ে নাও। উভয় হাত কনুইসহ ধুয়ে নাও। মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও। (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬) আরও পড়ুন-ইলম অনুযায়ী আমল না করলে যে শাস্তি দেয়া হবে নামাজের জন্য শর্ত ও আল্লাহর নির্দেশ পালনে যারা ওজু করবে এবং প্রত্যেকবার ওজু করার পর কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে, তাদের জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই খোলা থাকবে। হাদিসে এসেছে- হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি উত্তমরূপে ওজু করার পর (কালেমা শাহাদাত) বলে- أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই, তিনি একক এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, (হজরত) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসুল- তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে। (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ) ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া: নামাজ ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য প্রতিদিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর নিয়মিত একটি আমল হলো- আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা। নিয়মিত এ আমল করলে আমলকারী ও জান্নাতের সঙ্গে পার্থক্য হবে শুধুই মৃত্যু। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে- اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ উচ্চারণ- আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিয়্যুল আজিম। ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বাধা থাকবে না। (বুখারি, নাসাঈ, তাবারানি) মুমিন মুসলমান প্রতিদিন প্রত্যেক ওয়াক্তই আজান শুনে, নামাজের ওজু করে আবার নামাজ পড়ে। সুতরাং আজানের উত্তর দেয়া, ওজুর পর কালেমা শাহাদাত পড়া এবং ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা কঠিন কিছু নয়। অল্প সময়ের ছোট ছোট এসব আমলেই রয়েছে অনেক ফজিলত ও পুরস্কার। যা আমাদের জন্য সুনিশ্চিত জান্নাতের হাতছানি। সুতরাং আজান, ওজু ও নামাজের এ আমলগুলো নিয়মিত করা জরুরি। আল্লাহ তাআলা প্রতি ওয়াক্তে সবাইকে এ আমলগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করার মাধ্যমে চিরস্থায়ী জান্নাতের মালিক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। লেখক : প্রভাষক, নিশ্চিন্তপুর দারুস্সুন্নাহ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, কচুয়া, চাঁদপুর। আডি/ ০৫ সেপ্টেম্বর
https://ift.tt/3brW3yx
0 Comments