https://ift.tt/eA8V8J
বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়র আইনজীবী মাহবুবে আলম মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। করোনা ভাইরাস সংক্রমণমুক্ত হলেও সুস্থ হয়ে আর ফিরতে পারলেন না রাষ্ট্রপক্ষের এই সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার কর্মজীবন : ১৯৭৫ সাল থেকে হাইকোর্টে আইন পেশায় যুক্ত মাহবুবে আলম। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সভাপতির পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন । সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৯৯৩-৯৪ সালে সম্পাদক ও ২০০৫-০৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০০৪-০৭ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে নিযুক্ত হন তিনি। ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে পাঁচ বছর পূর্ণ হয় তার। এরপর আরেক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে তাকে এই পদে বহাল রাখা হয়। আমৃত্যু তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত দীর্ঘমেয়াদে আর কোনো অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের রেকর্ড নেই। কর্মজীবনে দক্ষতা ও সাফল্যে মাহবুবে আলম সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে স্বীকৃতি পান ১৯৯৮ সালে। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৩-৯৪ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ২০০৫-০৬ মেয়াদে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা; সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলা; বিশেষ করে কাদের মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মো. কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলা রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করেছেন মাহবুবে আলম। আরও পড়ুন: মাহবুবে আলমের অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে : প্রধানমন্ত্রী এ ছাড়া তিনি রাষ্ট্রপক্ষে আপিলেট ডিভিশনে মামলা পরিচালনা করেছেন। হাইকোর্ট ডিভিশনে বিডিআর বিদ্রোহ হত্যামামলায় রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি রাষ্ট্রের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেছেন এবং সফলতার সাথে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন মাহবুবে আলম। সেনা নিয়ন্ত্রিত ওই সরকার আমলে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর শীর্ষ আইনজীবীদের অনেকে পিছুটান দিলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পক্ষে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। দৃশ্যত সেই কারণেই তার ওপর আস্থাবান ছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান মাহবুবে আলম। তার পর থেকে টানা ১১ বছর তিনি এ দায়িত্বে বহাল ছিলেন। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে তাকে প্রার্থী না করে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বই চালিয়ে যেতে বলা হয়। বিশেষ গুণাবলি : সুপ্রিম কোর্টে তিনি একজন কঠোর পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে সর্বজন পরিচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ও গবেষণাধর্মী চিন্তা-চেতনা দেখে সবাই মুগ্ধ হয় এবং অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে। দায়িত্ব ও আইনচর্চার প্রতিও তিনি ছিলেন অনড়। আদালতের অন্যান্য অতিরিক্ত অ্যাটর্নি ও ডেপুটি অ্যাটর্নি এবং সহকারী অ্যাটর্নিরা ভালো দায়িত্ব পালন করতে চাইলে তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। আদালত বন্ধ হওয়ার পরও তিনি রাত ৯টা পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের লাইব্রেরিতে থেকে মামলার প্রস্তুতি নিতেন। এ ছাড়াও তিনি একজন দানশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবেও পরিচিত। গোপনে অনেকের চিকিৎসা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। কাউকেই জানতে কিংবা প্রচারও করতেন না। মানবিক একজন মানুষ হিসেবে তিনি দেশের আইনাঙ্গনে বেশ আলোচিত মানুষ হিসেবে পরিচিত। ব্যক্তি জীবনেও তিনি একজন সফল মানুষ। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছেলে সুমন মাহবুব সাংবাদিকতা পেশায় ও মেয়ে শিশির কনা আইনপেশা ও জামাতা শেখ রিয়াজুল হকও আইনপেশায় আছেন। তারা উভয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামসহ বেড়ানোর উদ্দেশে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, হংকং, কোরিয়া ও তানজানিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশ সফর করেছেন। জন্মস্থান ও শিক্ষাজীবন : অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ১৯৪৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার মৌছামান্দ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও ১৯৬৯ সালে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনপেশা পরিচালনার অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে আইনপেশা পরিচালনার অনুমতিপ্রাপ্ত হন এবং ১৯৮০ সালে আপিলেট ডিভিশনে আইনপেশা পরিচালনার অনুমতিপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৮ সালে আপিলেট ডিভিশনে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ১৯৭৯ সালে ভারতের নয়াদিল্লির ইনস্টিটিউট অব কনস্টিটিশনাল অ্যান্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজ থেকে সাংবিধানিক আইন ও পার্লামেন্টারি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। সূত্র : আমারসংবাদ এম এন / ২৮ সেপ্টেম্বর
https://ift.tt/36pAJJF
0 Comments