ট্যারেন্টের যাবজ্জীবন সাজার রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন জাসিন্দা আর্ডান

https://ift.tt/eA8V8J
ওয়েলিংটন, ২৭ আগস্ট - ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে জুমার সময় এলোপাতাড়ি গুলি করে ৫১ মুসল্লিকে হত্যার ঘটনায় সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে যাবজ্জীবন সাজার রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আর্ডান। তিনি বলেন, তার আজীবন সম্পূর্ণ ও একদম নীরবতা প্রাপ্য। এই হামলার ঘটনায় তিনি যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, তা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। জাসিন্দা বলেন, ১৫ মার্চের যন্ত্রণা সহজেই নিরাময়যোগ্য না। কিন্তু আজ, আমার প্রত্যাশা, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা সন্ত্রাসীদের নাম উচ্চারণ কিংবা শোনার কোনো অজুহাত আমাদের থাকার দরকার নেই। বৃহস্পতিবার সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের আদালত। সাজার রায়ে এই ঘৃণ্য অপরাধীর জন্য কোনো প্যারোলের সুযোগ রাখা হয়নি। দেশটিতে এই প্রথমবারের মতো কোনো অপরাধীকে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে। খবরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সাজা ঘোষণার সময় ক্রাইস্টচার্চের হাইকোর্টের বিচারক ক্যামেরন ম্যান্ডের বলেন, সসীম মেয়াদে সাজা তার জন্য যথেষ্ট না। তার অপরাধ এতটাই বিদ্বেষপূর্ণ যে, তাকে যদি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আটকে রাখা হয়, তবে তার অভিশাপ ও সাজা যথেষ্ট হবে না। তিনি বলেন, যতদূর পর্যন্ত আমি উপলব্ধি করতে পারি, ভুক্তভোগীদের প্রতি তার কোনো সহানুভূতি ছিল না। ট্যারেন্টকে রায়ের শুনানির জন্য সোমবার আদালতে হাজির করা হয়েছিল। কয়েক দিনের শুনানির পর ভুক্তভোগীদের পরিবার সদস্যদের উপস্থিতিতে তার সাজার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার রায়ের শুনানির জন্য তাকে ক্রাইস্টচার্চে নিয়ে আসা হয়েছে। টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রোববার বিকালে স্থানীয় বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর একটি বিমান থেকে তাকে নামানো হয়। এ সময় তার শরীরে সুরক্ষা পোশাক ও মাথায় হেলমেট ছিল। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তাকে ঘিরে রেখেছিল। এরপর একটি সাদা ভ্যানের পেছনে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এই উগ্রপন্থীকে। ৫১ মুসল্লিকে হত্যা, ৪১ জনকে হত্যাচেষ্টা ও একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগের দোষ স্বীকার করেছে এই অস্ট্রেলীয় সন্ত্রাসী। খবরে জানা গেছে, অকল্যান্ডের পারেমোরেমোতে অবস্থিত কারাগার থেকে ঘটনাস্থল ক্রাইস্টচার্চে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। আদালতের শুনানিতে হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তাদের বক্তব্য রাখেন। রায় ঘোষণার আগে ব্রেন্টন ট্যারেন্টকেও জবানবন্দি দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আরও পড়ুন: ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলাকারীর যাবজ্জীবন দণ্ড নিউজিল্যান্ডে হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে। মুক্তির কোনো সম্ভাবনা না রেখেই বিচারকের এমন রায় দেশটিতে একেবারে বিরল। শরীর চর্চার প্রশিক্ষক ট্যারেন্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডে যান ২০১৭ সালে। এরপর অস্ত্র সংগ্রহ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ যার বাস্তবায়ন ঘটে। তার স্বজনদের সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, তার বয়স যখন কুড়ি, তখন বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে ইউরোপ ভ্রমণের সময় সে উগ্রপন্থার সংস্পর্শে আসে। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে উগ্রপন্থীদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। মসজিদে হামলার আগে অনলাইনে প্রকাশ করা এক ইশতেহারে মুসলমান ও অ-ইউরোপীয় অভিবাসীদের প্রতি তার ঘৃণার কথা জানায়। ব্যাপক প্রতিস্থাপন তত্ত্বের প্রতি তার বিশ্বাসের কথাও প্রকাশ করেছে। এই তত্ত্বের মতে, শ্বেতাঙ্গদের জন্মহার কমে যাওয়ার কারণে অশ্বেতাঙ্গরা সেই জায়গা দখল করে নেবে। তার ইশতেহার ও হত্যার ভিডিও নিউজিল্যান্ডে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ২৯ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় জুমার সময় মুসল্লিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালালে আল-নূর মসজিদের ৪৪ মুসল্লি ও কয়েক মাইল দূরের লিনইউড মসজিদের সাত মুসল্লি নিহত হন। যাদের সে হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে তিন বছর বয়সী শিশুও ছিল। হত্যাকাণ্ডে পাঁচটি অস্ত্র ব্যবহার করেছে ট্যারেন্ট। যা সে বৈধভাবেই কিনেছে। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে আর কখনো এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। এই ঘটনার পর নিউজিল্যান্ডের বন্দুক আইন সংশোধন করা হয়েছে। এতে বেসামরিক লোকদের জন্য আধাস্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর ৫৬ হাজার ২৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ক্রেতাদের কাছ থেকে ফেরত নেয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ট্যারেন্ট নিজের নৃশংসতা দেখাতে চেয়েছে। যে কারণে মসজিদে গুলি চালিয়ে সে যখন নিরাপদ মানুষের রক্তের বন্যা বইয়ে দিচ্ছিল, তখন সে তা সরাসরি ফেসবুকে সম্প্রচার করেছে। সূত্র : যুগান্তর এন এইচ, ২৭ আগস্ট
https://ift.tt/34BdN9a

Post a Comment

0 Comments