কে রুখবে পাহাড়খেকো তৈয়বকে

https://ift.tt/eA8V8J
চট্টগ্রাম, ২৮ আগস্ট- মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব। জালালাবাদ তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার কর্ণধার তিনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে তিনি এক মূর্তিমান আতঙ্ক। পাহাড় কেটে তিনি প্রথমে মসজিদ, মাদ্রাসা করেন। পরে সেই স্থাপনার চারপাশে আরও পাহাড় কেটে গড়ে তোলেন শত শত অবৈধ ঘর। ভুয়া দলিল করে এর পর তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তা বিক্রি করেন প্লট আকারে। এমন অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভূমি অফিসের পৃথক তদন্ত টিম। দুটি পাহাড় ও একটি ছড়া দখল করে তিনি এবার প্রায় এক লাখ ৫৬ হাজার ১৫০ ঘনফুট উচ্চতার ১২ হাজার ৮০০ বর্গফুট জায়গা দখল করে ফেলেছেন বলে উল্লেখ আছে প্রতিবেদনে। এর আগেও একটি পাহাড়ের তিনটি স্থানে ৩২ হাজার ৬০০ ঘনফুট কাটার প্রমাণ মেলায় তাকে ৩২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এভাবে একাধিক মামলা ও জরিমানা করার পরও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি তাকে। নানা কৌশলে তিনি পাহাড় কাটতে থাকেন। তাই গত মঙ্গলবার ফের শুনানিতে উপস্থিত হতে তাকে নোটিশ করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে সেই শুনানিতেও অংশ নেননি তিনি। অভিযুক্ত হাফেজ মো. তৈয়ব চট্টগ্রাম প্রাইভেট মাদ্রাসা অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক নূর উল্ল্যা নূরী বলেন, হাফেজ মো. তৈয়বের বিরুদ্ধে তিনটি পাহাড় ও একটি ছড়া কাটার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা একাধিকবার সরেজমিন পরিদর্শন করে পাহাড় কেটে মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন বসতি গড়ার প্রমাণও পেয়েছেন। মামলা করে আমরা একবার ৩২ লাখ টাকা জরিমানাও করেছি তাকে। এখন আবার প্রায় এক লাখ ৫৬ হাজার ১৫০ ঘনফুট উচ্চতার ১২ হাজার ৮০০ বর্গফুট জায়গা দখল করেছেন। তাই আবার নতুন করে তাকে নোটিশ করা হয়। এবার আর চট্টগ্রাম নয়; তার বিরুদ্ধে শুনানি হবে ঢাকায়। এখন ঢাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। ঢাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) রুবিনা আকতার বলেন, নোটিশ করার পরও শুনানিতে অংশ নেননি তৈয়ব হুজুর। আইন অনুযায়ী আমরা তাকে সর্বোচ্চ তিনবার নোটিশ করব। এর পর তার আর কোনো কথা শোনা হবে না। ঘটনাস্থলে গিয়ে সরাসরি জরিমানা করা হবে। মামলা করা হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ স্থাপনার সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।হতবাক পরিদর্শক টিমও :মো. তৈয়বের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। পাহাড় ও ছড়া কাটার সর্বশেষ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে যান পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক, পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম ও আবুল মনসুর মোল্লা। গত ২১ ও ২৬ জুলাই দুদফায় ঘটনাস্থলে যান তারা। এ সময় ভূমি অফিসের পক্ষে সার্ভেয়ার নিরুপম চাকমা, উপসহকারী কর্মকর্তা কাজী আশরাফ উদ্দিন, জুলকার নাইন উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষেও লোকজন উপস্থিত ছিলেন ঘটনাস্থলে। নির্বিচারে পাহাড় কাটা দেখে এ সময় হতবাক হয়ে যান তারা। পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ার প্রমাণ পাওয়ায় এই টিম মো. তৈয়বের সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। ঘটনাস্থলের কোথায় কী পরিমাণ পাহাড় কাটা হয়েছে, বর্তমানে কোন স্থাপনা কী অবস্থায় আছে; বিস্তারিত তুলে ধরে এই টিম। ভূমি অফিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জালালাবাদ মৌজায় বিএস ১ নম্বর খতিয়ানের ৭০৩ নম্বর দাগে ২ দশমিক ৬৩ একর, ৭০৯ নম্বর দাগে দশমিক ২৪ একর, ৭১৬ নম্বর দাগে ৩ দশমিক ৬৬ একর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দখল করা এসব জায়গার মোট পরিমাণ প্রায় ৬ দশমিক ৫৩ একর। এর আগে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩২ হাজার ৬০০ ঘনফুট পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়ায় ৩২ লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর। তখন তার বিরুদ্ধে পিএস ৮০৪, ৮০৯, ৮১০, ৮১৫, ৮২৫, ৮১১. ৮১২, ৮১৪, ৮২২ ও ৮২৬ নম্বর দাগে পাহাড় কাটার প্রমাণ পায় তারা। সরেজমিন চিত্র: সরেজমিন পরিদর্শন শেষে পরিদর্শক টিম প্রতিটি ঘটনাস্থলের আলাদাভাবে বর্ণণা দেয়। ঘটনাস্থল-১ এর বর্ণণা দিতে গিয়ে তারা উল্লেখ করেন, এখানে পাহাড় কেটে তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার ছাত্রাবাস করা হয়েছে। বিএস দাগ নম্বর ৭০৩, ৭০৯, ও ৭১৬ ক্ষতিগ্রস্ত করে ছাত্রাবাসের জন্য তিনটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এই তিনটি ঘরের মধ্যে দুটি নির্মাণ করা হয়েছে ছড়ার জমি দখল করে। পরিদর্শনকালে ছড়ার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তারা। এ সময় তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক আইয়ুব আলী ছড়া দখল করে এসব ঘর তৈয়ব হুজুর নির্মাণ করেছেন বলে জানান পরিদর্শক টিমকে। এভাবে এখানে ৭০ হাজার ৩০০ ঘনফুট পাহাড় ও টিলা কাটা হয়েছে। মাদ্রাসা ছাত্রাবাসের পূর্ব-উত্তর কোণে দুই নম্বর ঘটনাস্থল। এখানে পাহাড় কেটে নীল রংয়ের দুটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৬ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটা হয়েছে এখানে। এখানে গিয়ে মাহফুজা আকতার ও ছাদিকা বেগম নামে দুই নারীকে পরিবার নিয়ে বাস করতে দেখা যায়। ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৬ বছর আগে পাহাড়ের এই জায়গাটি কিনে নিয়েছেন বলে পরিদর্শক টিমকে জানান ছাদিকা বেগম। পাহাড় দখল করতে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদও। এই মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে আছে টিনশেড স্থাপনা। ২০০৬ সালে মসজিদ নির্মাণের পর ২০০৯ সালে আবার এই ঘর নির্মাণ করা হয়। মাদ্রাসার মূল ভবন থেকে আনুমানিক ৩০০ ফুট উত্তর-পূর্বে সম্প্রতি পাহাড় কেটে আবার তিনটি টিনশেড ঘর ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত হাফেজ মো. তৈয়ব যা বললেন : পাহাড় কাটার সব অভিযোগ অস্বীকার করে জালালাবাদ তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার কর্ণধার মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব বলেন, পাহাড় কেটে কোথাও আমার নামে কোনো স্থাপনা করিনি। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার নাম জড়ানো হয়েছে। আমি খুব অসুস্থ। এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে আর বেশি কথা বলতে পারছি না। পাহাড় কাটার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে আপনাকে কেন ৩২ লাখ টাকা ইতোপূর্বে জরিমানা করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবেশ অধদপ্তর একতরফা শুনানি করে আমার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। এই রায় বাতিল করার আবেদন জানিয়েছি। শুনানিতে আমার পক্ষে কেউ উপস্থিত ছিল না। পাহাড় কাটার অভিযোগে নতুন করে আবার কেন শুনানিতে ডাকা হলো আপনাকে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের যা ইচ্ছা হচ্ছে তা করছে। এম এন / ২৮ আগস্ট
https://ift.tt/3jyxVgD

Post a Comment

0 Comments