শত কোটির দুর্নীতি, তদন্তের আগেই ফারইষ্ট সিইওর অনুমোদন

https://ift.tt/eA8V8J
ঢাকা, ২১ জুলাই- পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই তার নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে ফারইষ্ট লাইফের সিইও হেমায়েত উল্লাহর নিয়োগ নবায়নের অনুমোদন চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম আইডিআরএর কাছে আবেদন করেন। এর মধ্যেই হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের আগস্টে তা তদন্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আইডিআরএ-কে নির্দেশ দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর হেমায়েত উল্লাহর দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। তবে রহস্যজনকভাবে তদন্ত শেষ করার আগেই হেমায়েত উল্লাহর নিয়োগ অনুমোদন দেয় আইডিআরএ। পরবর্তীতে হেমায়েত উল্লাহ ও ফারইষ্ট লাইফের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে হেমায়েত উল্লাহকে সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অপরদিকে, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির দায় এককভাবে চাপানো হয় ফারইষ্ট লাইফের সাবেক পরিচালক এম এ খালেকের ওপর। বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফারইষ্ট লাইফের দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তের ক্ষেত্রে আইডিআরএর ভূমিকা রহস্যজনক। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সিইও হিসেবে অনুমোদন দেয়া এবং পরবর্তীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির একতরফা বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা রহস্যজনক। তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এ ধরনের প্রতিবেদন দিয়েছেন কি-না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হেমায়েত উল্লাহর নিয়োগ অনুমোদনের আবেদন পর্যালোচনা করে আইডিআরএ গত ১৯ আগস্ট একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে। এতে বলা হয়, জনস্বার্থে দুর্নীতি তদন্তপূর্বক ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহকে পুনঃনিয়োগ না দেয়ার জন্য মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল নামের একজন অভিযোগ করেছেন। আইডিআরএর নথিতে হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্যও তুলে ধরে বলা হয়, কোম্পানির পরিচালনাপর্ষদের নিকট অভিযোগপত্রের কপি পাঠিয়ে সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা যেতে পারে। এরপর হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক শেখ মোহাম্মদ রেজাউল ইসলামকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্য হলেন আইডিআরএর পরিচালক মো. শাহ আলম। হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে কোম্পানির টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা। কোম্পানির নামে ঢাকার মিরপুর চাটবাড়িতে ক্রয় করা সম্পত্তির মূল্য দেড়গুণ বেশি দেখিয়ে কোম্পানির টাকা নেয়া। চাটবাড়িতে ক্রয় করা সম্পত্তিতে কোনো উন্নয়নের কাজ না করেই উন্নয়ন ব্যয় দেখানো। কোম্পানির উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত ঋণ কোম্পানির হিসাবে থেকে পরিশোধ করা। শেয়ার ব্যবসার জন্য কোম্পানির ১০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করা। সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে লোন দিয়ে সেই টাকা বিভিন্ন নামে আত্মসাৎ করা। কোম্পানির টাকা নিজের ব্যক্তিগত হিসাবে জমা দেয়া। ঠিকাদারের ভুয়া হিসাব খুলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমিশন নেয়া। বিভিন্ন ব্যাংকে কমিশনের মাধ্যমে কোম্পানির শত শত কোটি টাকা কম লাভে এমটিডিআর করা। ব্যাংক থেকে কোম্পানির টাকার বিপরীতে ব্যক্তিগত লোন করে কোম্পানি থেকে নগদ উত্তোলন করে এর সুদ পরিশোধ করা। পরবর্তীতে এসব অভিযোগের বিষয়ে চলতি বছরের শুরুর দিকে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আইডিআরএ। অবশ্য তার আগেই রহস্যজনকভাবে গত বছরের ২৩ আগস্ট আইডিআরএ থেকে হেমায়েত উল্লাহর নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়। এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্রের কোনো তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। হেমায়েত উল্লাহ ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। কোম্পানিতে আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও তার জন্য এককভাবে দায়ী করা হয়েছে ফারইষ্ট লাইফের সাবেক পরিচালক এম এ খালেককে। এ বিষয়ে একাধিক বীমা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, একটি কোম্পানিতে যখন অনিয়ম হয়, তখন সিইও কিছুতেই তার দায় এড়াতে পারেন না। সুতরাং ফারইষ্ট লাইফের অনিয়মের দায় অবশ্যই সিইওর ওপর পড়বে। অথচ আইডিআরএর তদন্ত প্রতিবেদনে একদিকে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে বলে স্বীকার করা হয়েছে, অন্যদিকে এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে মুখ্য নির্বাহীকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। শত শত কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে আইডিআরএর এ ধরনের ভূমিকা রহস্যজনক। তারা আরও বলেন, একজন সিইওর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠল। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করতে বলল। সেজন্য আইডিআরএ তদন্ত কমিটিও গঠন করল। কিন্তু তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই কীভাবে সেই সিইওর অনুমোদন দিয়ে দেয়া হলো এটা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। এ ধরনের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অর্থের লেনদেন হওয়ার সন্দেহ সৃষ্টি করে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ জীবন বীমা সংক্রান্ত সদস্য ড. এম. মোশাররফ হোসেন বলেন, ফারইষ্ট ইসলামী লাইফে কোনো অনিয়ম হলে তার দায় কিছুতেই সিইও এড়াতে পারেন না। তদন্তের কাজ এখনও চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সিইওর অনুমোদন না দেয়া উচিত ছিল। দ্রুত তদন্ত শেষ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ ছিল। তবে এখনও সুযোগ আছে, তদন্তে দোষীসাব্যস্ত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের সিইও হেমায়েত উল্লাহর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
https://ift.tt/30uWDqa

Post a Comment

0 Comments