তুরস্কের সংসদে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন

https://ift.tt/eA8V8J
আঙ্কারা, ৩১ জুলাই - সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে তুরস্কের সংসদ একটি আইন পাশ করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই আইন বাকস্বাধীনতার প্রতি বড় হুমকি। তুরস্ক এমন সময় এই নতুন আইন প্রবর্তন করল যখন অনলাইনে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা থেকে শুরু করে করোনাভাইরাস নিয়ে ভুয়া তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ কীভাবে আরও জোরদার করা যায়, বিশ্ব জুড়ে তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। এই আইনের আওতায় সামাজিক মাধ্যমের যেসব প্ল্যাটফর্মের দশ লাখের বেশি অনুসারী আছে, তাদের তুরস্কে স্থানীয় কার্যালয় থাকতে হবে এবং সরকার কোন কন্টেন্ট সরাতে বললে তাদের সেটা মানতে হবে। কোন সংস্থা এই নির্দেশ অমান্য করলে তাদের জরিমানা করা হবে এবং তাদের ডেটা সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর এর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ তাদের ডেটা সরবরাহের গতি ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়া হবে। এই পরিবর্তন প্রযোজ্য হবে ফেসবুক, গুগল, টিকটক এবং টুইটারের মত বিশাল প্রযুক্তি সংস্থাগুলোসহ বিভিন্ন কোম্পানি এবং সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে। নতুন আইনে নির্দেশ অমান্যকারী সংস্থাগুলোর ব্যান্ডউইথ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা হতে পারে। এর ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবে না। নতুন আইন অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত তথ্য তুরস্কে সংরক্ষিত রাখা হবে।তুরস্কের ৮ কোটি ৪০ লাখ জনগণের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলো খুবই জনপ্রিয়। দেশটির কয়েক কোটি সোশাল ব্যবহারকারীর কাছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট এবং টিকটক সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। সরকার বলছে, এই আইনের লক্ষ্য সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই এবং লাগামহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা দেয়া। কয়েক মাস ধরেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান সামাজিকমাধ্যম গুলোকে অনৈতিক বলে বর্ণনা করে আসছেন এবং এসব সাইটকে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি যে বদ্ধপরিকর সে কথা তিনি কখনই গোপন করেননি। তুরস্কের সংসদে এই নতুন আইন নিয়ে বিতর্কের সময় প্রায়ই জার্মানির উদাহরণ টানা হয়েছে এবং অনলাইন নিয়মবিধির ক্ষেত্রে জার্মানিকে আদর্শ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। জার্মানি ২০১৭ সালে নেটজেডডিজি নামে একটি নেটওয়ার্ক এনফোর্সমেন্ট অ্যাক্ট বা নেটওয়ার্ক আইন চালু করে। একইভাবে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য এবং আপত্তিকর কন্টেন্টকে ওই আইনের আওতায় আনা হয়েছিল। আরও পড়ুন: ইরাকের যোদ্ধারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না জার্মানিতেও সোশাল নেটওয়ার্ক আপত্তিকর কোন পোস্ট ২৪ ঘন্টার মধ্যে না সরালে আইন অনুযায়ী তাদের ৫০ মিলিয়ন ইউরো (৫ কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার) জরিমানার বিধান আছে। জার্মানিতে এই আইনের বিধান সম্প্রতি আরও বাড়ানো হয়েছে যেন ফৌজদারি অপরাধের জন্য সন্দেহ করা হচ্ছে এমন কন্টেন্ট সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মকে জার্মান পুলিশের কাছে সরাসরি পাঠাতে বলা হয়েছে। জার্মানির গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বাকস্বাধীনতার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে রক্ষা করার রেওয়াজ চালু রয়েছে। কিন্তু তুরস্কের একনায়ক শাসন কাঠামোয় অনলাইনের স্বাধীনতা দিন দিন খর্ব করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তুরস্কে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের ওপর কড়া নজর রাখা হয়। এরদোয়ান বা তার মন্ত্রীদের অপমান করার দায়ে অথবা বিদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলার সমালোচনা করায় অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। গত এক দশকে তুরস্কের মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের অধিকাংশই সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ফলে সমালোচকদের মন্তব্য করার এবং নিরপেক্ষ সংবাদ তুলে ধরার জন্য জায়গা করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নতুন এই আইনকে ব্যাখ্যা করেছে তুরস্কে বাকস্বাধীনতার ওপর সবচেয়ে গুরুতর আঘাত হিসেবে। নতুন ইন্টারনেট আইনের ফলে পুলিশের সাথে সরকারের একযোগে কাজ করার ক্ষমতা বেড়ে যাবে এবং তারা অনলাইনে সেন্সরশিপ চালাতে পারবে। এর ফলে যারা ভিন্নমত প্রকাশ করার কারণে ইতোমধ্যেই সরকারের বিরাগভাজন হয়েছে এবং সরকার যাদের নির্দয়ভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে তাদের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন অ্যামনেস্টির তুরস্ক বিষয়ক গবেষক অ্যান্ড্রু গাডর্নার। তবে এই আইন সেন্সরশিপকে উৎসাহিত করবে এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন। তিনি বলেছেন, এই আইন তৈরি করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোর সাথে একটা যথাযথ বাণিজ্যিক ও আইনি সম্পর্ক গড়ে তোলার স্বার্থে। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ৩১ জুলাই
https://ift.tt/339Zqb4

Post a Comment

0 Comments