দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বন্যা, অন্তত ২২১ প্রাণহানি

https://ift.tt/eA8V8J
ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসের কারণে গত এক মাসে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে কমপক্ষে ২২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। অঞ্চলটির দেশগুলোর সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যের বরাতে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বন্যা ও ভূমিধসের কারণে নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের দশ লাখেরও বেশি মানুষ এখন পানিবন্দী। কয়েক লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র উঁচু স্থানে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। বন্যকবলিতদের অনেকে খাবার পাচ্ছেন না। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। ভারতীয় কর্মকর্তারা শুক্রবার বলছেন, নতুন করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরও ১৬ এবং মুম্বাইয়ে ভবন ধসে আটজনসহ দেশটিতে বন্যা-ভূমিধসে দেশজুড়ে ১০১ জন মারা গেছেন। এছাড়া গত এক মাসের বন্যায় নেপালে কমপক্ষে ১১৭ জন ছাড়াও বাংলাদেশে বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা তিনজন বলে জানা গেছে। উৎপত্তি স্থল তিব্বত থেকে ভারত ও বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া এশিয়ার দীর্ঘতম নদী প্লাবিত হওয়ায় গত মাসে ভারতের আসাম রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। শুধু বন্যা নয় শুরু হয় ভূমিধসও। কর্মকর্তারা বলছেন, আসামে ৩৬ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। আসামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান এম এস মান্নিভানান বলছেনম বন্যায় প্লাবিত অঞ্চলগুলোতে আটকা পড়া আনুমানিক চার হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে এমন ৩৬ হাজার মানুষকে সরকার পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান তিনি। শুধু মানুষ নয় আসামের ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার এখন পানির নিচে। এর ফলে এক সিংওয়ালা গন্ডারের জন্য বিখ্যাত এই অভয়ারণ্যে অনেক গন্ডার ও বন্য শূকর পানিতে ডুবে মারা গেছে। আসামের বনমন্ত্রী পরিমল শুকলাবাদিয়ে বার্তা সংস্থা এএফকি বলেন, আমি বলতে চাই রাজ্যে যত ভয়াবহ বন্যা হয়েছে এই বন্যা তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কটির জন্য সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে প্রলয়ংকারী বন্যা দেখা দিয়েছে এ বছর। নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারেও বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। নেপালে ভারী বর্ষণে কমপক্ষে নয়টি নদী ফুলে গেছে এবং সেসব নদীতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার উপর দিয়ে। বন্যার কারণে বহু গ্রাম ডুবে গেছে। প্রাদেশিক আবহাওয়া দফতর আগামী দুইদিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দক্ষিণের সমভূমি অঞ্চল প্লাবিত এবং পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে কমপক্ষে ১১৭ জন নিহত হয়েছে। কমপক্ষে ৪৭ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া গুরতর আহত হয়েছেন কিংবা চোট পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা ১২৬ জন। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভারী বৃষ্টি ও নদীর প্লাবনের কারণে গত মাসে বন্যা শুরুর পর থেকে কমপক্ষে তিনজনের প্রাণহানি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন দশ লাখের বেশি মানুষ। বলা হচ্ছে, ১৬ বছর অর্থাৎ ২০০৪ সালের পর এমন দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। আল-জাজিরা বলছে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীর সংখ্যা ২৩০টি। এবারে দেশটিতে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার মূল কারণ, ভারী বৃষ্টি এবং উজানে (বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারত অংশে) ধাপে ধাপে ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়া। দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস ও সতর্কতা কেন্দ্র বৃহস্পতিবার জানায়, বহ্মপুত্র এবং তিস্তা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় আগামী সপ্তাহ থেকে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। এছাড়া আগামী দুই সপ্তাহ বন্যার পরিস্থিতি উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে তাতে জানানো হয়েছে। সূত্র : জাগো নিউজ এম এন / ১৯ জুলাই
https://ift.tt/2ZI1dCa

Post a Comment

0 Comments