https://ift.tt/eA8V8J
ঢাকা, ২১ জুলাই- মো. মাহতাব হোসেন। কাগজে-কলমে মেসার্স বিটিএল নামক পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তিনি। প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছেন ৫৫ মতিঝিল রোড, ঢাকা। একই ঠিকানা দেখিয়েছেন নিজের আরেকটি প্রতিষ্ঠানেরও, যেটির নাম মেসার্স মাহিন টেক্সটাইল। সরেজমিনে গিয়ে এ ঠিকানায় ওই নামের কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। এছাড়া পিনাকল টেক্সটাইল নামে টঙ্গীর একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবেও রয়েছেন এই মাহতাব। সেটিরও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। যদিও এই তিন প্রতিষ্ঠানের নামে বছর দশেক আগে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি। অপরাধের ১০ বছর পর এই তথ্য উদঘাটন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির অনুসন্ধান বলছে, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করতেই খোলা হয় অস্তিত্ববিহীন এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মাহতাব হোসেন। এরপর একশ্রেণীর অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় ২০১১-১২ সালের দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে বের করে নেন ৫০০ কোটি টাকা। শিগগিরই এ বিষয়ে মামলা করা হবে বলেও দুদক-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, মেসার্স বিটিএল, মেসার্স মাহিন টেক্সটাইল ও মেসার্স পিনাকল টেক্সটাইল (প্রাইভেট) লিমিটেড পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। কাগুজে এসব প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যাংকের টাকায় রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠান তিনটির স্বত্বাধিকারী মো. মাহতাব হোসেন। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে উদারহস্তে এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে এলসি সুবিধা দিয়েছেন ব্যাংকেরই কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা। দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মো. মাহতাব হোসেন বলেন, ব্যাংকের টাকা ব্যাংক বুঝে পেয়েছে। ব্যাংক আমাকে ছাড় দিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে আমার আর বলার কিছু নেই। দেশে প্রচলিত ব্যাংকিং আইন ও বিধি অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত বৈদেশিক বিনিময় বাণিজ্য ঋণের অর্পিত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে। রফতানি ঋণপত্রের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের অর্থায়ন না থাকলে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যে স্থানীয় বিল ক্রয়ের ক্ষমতা রয়েছে মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তার। কিন্তু ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখার তত্কালীন ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান খান সেই সীমা লঙ্ঘন করেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে জাল কাগজপত্রের ভিত্তিতে জেনেশুনেই ভুয়া স্থানীয় এলসির মাধ্যমে ঋণ প্রদান করেন। সেই ঋণের স্থিতি বর্তমানে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। দুদকের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা ও প্রধান কার্যালয় একই ভবনে অবস্থিত। এ কারণে কেস টু কেস ভিত্তিতে মঞ্জুরিসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সব নথিই শাখা কর্তৃক এমডি পর্যন্ত অনুমোদন গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় বিল ক্রয়ের ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করা হলেও শাখা থেকে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়নি। মেয়াদ উত্তীর্ণ বিল থাকা সত্ত্বেও দফায় দফায় তাদের বিল ক্রয় করা হয়েছে। অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে, শাখার নথিতে প্রতিষ্ঠান তিনটির কারখানার অবস্থানসংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। প্রকৃতপক্ষে এই তিনটি প্রতিষ্ঠান পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বা সরবরাহের ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা ও অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অ্যাকোমোডেশনের মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন। এসব ঋণের বিপরীতে কোনো মর্টগেজও রাখা হয়নি। অনুসন্ধানে এ অর্থ জালিয়াতির সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মিজানুর রহমান খান, জিএম জহরলাল রায়, এজিএম মো. আব্দুল আজিজ দেওয়ান, এসপিও হাবিবুর রহমানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে দুদক। এই ঋণ জালিয়াতির অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান। তদারককারী ছিলেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, অভিযোগটি অনুসন্ধান চলছে। ব্যাংকটির অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে। অনুসন্ধান শেষ হলে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হবে। তার ভিত্তিতেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমি যোগদানের আগের। যেহেতু বিষয়টি ইনল্যান্ড বিল পারচেজ (আইবিপি) সংক্রান্ত, সেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বিলের পেমেন্ট হয়ে যাওয়ার কথা। এর চেয়ে বিস্তারিত শাখা পর্যায়ের তথ্য ছাড়া বলা সম্ভব নয়। এম এন / ২১ জুলাই
https://ift.tt/30tvzaR
0 Comments