https://ift.tt/eA8V8J
মুন্সীগঞ্জ, ৩০ জুন- একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছে মুন্সীগঞ্জে। এগুলোর বেশিরভাগের গন্তব্য সদর উপজেলার মিরকাদিমে। প্রতিটিতে রয়েছে একটি করে মরদেহ। ঢাকার সদরঘাটের কাছে লঞ্চডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন তারা। অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই মৃতদের বাড়ি থেকে শোনা যাচ্ছিল কান্নার আওয়াজ। অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে পৌঁছতেই তা গগনবিদারী হাহাকারে রূপ নেয়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ স্ত্রী, কেউ ভাইবোন আবার কেউ হারিয়েছেন প্রিয় মা-বাবা বা সন্তানকে। দুর্ঘটনায় নিহতদের অন্তত ৩০ জনই মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা। মরদেহ উদ্ধারের পর অ্যাম্বুলেন্সে তা নিয়ে আসা হয় জেলার সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। মৃতদের বেশ কয়েকজনের বাড়ি মিরকাদিম পৌরসভায়। গতকাল ওই দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া যাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের বুকফাটা কান্না। আবার কেউ শোকে একেবারেই নিশ্চুপ, স্তব্ধ। অপলক চোখে তাকিয়ে দেখছেন শোকাবহ পরিস্থিতি, কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন তারা। বস্তুত মিরকাদিম পৌরসভার প্রতিটি মহল্লা এখন শোকের সাগরে ভাসছে। বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবিতে প্রাণ হারানো সুমন তালুকদার যমুনা ব্যাংকের ইসলামপুর শাখায় কর্মরত ছিলেন। মিরকাদিম পৌরসভার নিজ বাড়ি থেকেই প্রতিদিন লঞ্চে গিয়ে অফিস করতেন তিনি। প্রতিদিনের মতো গতকালও সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি লঞ্চে ওঠেন। তবে ঢাকায় কর্মস্থলে পৌঁছার আগেই লঞ্চডুবিতে মারা যান সুমন। তার বড় ভাই ঘটনাস্থলে লাশ শনাক্ত করার সময় এসব কথা বলেন। নয়ন তালুকদার আরও বলেন, লঞ্চডুবির খবর পেয়ে ছোট ভাই ব্যাংক কর্মচারী সুমন তালুকদারের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পান। এর পরই মুন্সীগঞ্জ থেকে রওনা হয়ে ঢাকার সদরঘাটে গিয়ে সুমনের মরদেহ দেখতে পান তিনি। মিরকাদিমের পশ্চিমপাড়া এলাকার শিপলু শরীফ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য হার্ডওয়্যারের মালপত্র আনতে যাচ্ছিলেন। তিনিও মারা যান। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মিরকাদিমের পশ্চিমপাড়া এলাকায় শিপলুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রীসহ পরিবারের স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ। স্বজনের কোলে থাকা শিপলুর শিশুসন্তানটি ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে চারদিকে। বাড়িতে এত মানুষের ভিড় দেখলেও কী হয়েছে তা বুঝতে পারছে না। সে এখনও বুঝে উঠতে পারেনি তার প্রিয় বাবা এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আর কখনও তাকে কোলে নিয়ে আদর করবেন না। একই এলাকার পশ্চিমপাড়ার দিদার হোসেন (৪৫) ও তার বোন রুমা বেগম (৪০) লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাদের বাড়িতে গিয়ে জানা গেল, তারা দুজন তাদের অসুস্থ ভগ্নিপতিকে দেখতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুলাভাইকে আর দেখা হলো না তাদের। বরং খবর পেয়ে অসুস্থ দুলাভাই চলে এসেছেন তাদের শেষবারের মতো দেখতে। তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। একই এলাকার পরশ মিয়ার বাড়িতেও কান্নার রোল পড়েছে। তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫৪) ও মেয়ে সুমা আক্তার (২৪) সদরঘাটের সুমনা ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় সুফিয়া বেগম প্রাণ হারালেও বেঁচে গেছেন সুমা। লঞ্চডুবিতে বেঁচে যাওয়া যাত্রী জাহাঙ্গীর হোসেন ও নাসিমা আক্তার বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ময়ূর-২ লঞ্চটি তাদের মর্নিংবার্ড লঞ্চটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে মুহূর্তের মধ্যেই সেটি ডুবে যায়। এ সময় তারা কয়েকজন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও বেশির ভাগ যাত্রীই ডুবে যায়। তারা জানান, সকাল পৌনে ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি লঞ্চঘাট থেকে মর্নিংবার্ড লঞ্চটি সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। বেঁচে যাওয়া আরেক যাত্রী ফল বিক্রেতা মিরকাদিমের পশ্চিমপাড়া এলাকার ওমর মিয়া জানালেন, তিনি ঢাকায় যাচ্ছিলেন ফল কিনতে। তার সঙ্গে অন্য তিনজন হকারও ছিলেন। শ্যামবাজারের কাছে গেলে ময়ূর লঞ্চের ধাক্কায় তাদের লঞ্চটি মুহূর্তেই ডুবে যায়। এ সময় তিনি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে আশপাশ থেকে নৌকা ও ট্রলার তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডুবে যাওয়া লঞ্চটির বেশির ভাগ যাত্রী মিরকাদিম পৌরসভার পশ্চিমপাড়া, গোয়ালঘূর্ণি, রিকাবীবাজার, কাঠপট্টি, রামপাল, রামশিং, সিপাহীপাড়া, বজ্রযোগিনী ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাপুর, সলিমাবাদ গ্রামসহ আশপাশ এলাকার বাসিন্দা। সূত্র: সমকাল এম এন / ৩০ জুন
https://ift.tt/31tHnf7
0 Comments