কলকাতার মডেলে যেতে চায় সরকার

https://ift.tt/eA8V8J
ঢাকা, ৯ মে- মহামারী করোনা সংক্রমণের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে জানুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ২৯৮ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গুজরে মানুষের ত্রাহি অবস্থার মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বেশ জোরেশোরে মাঠে নামে। পরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যক্রম খুব একটা দৃশ্যমান নয়। নাগরিকরা বলছেন, ঢাকায় অন্য সময়ের চেয়ে এখন মশার উৎপাত বেশি। মশা নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও দুই মেয়রকে সতর্ক করে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে এবার মানুষকে সচেতন করতে গণমাধ্যমে প্রচারে জোর দিচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সতর্ক করে বলেছেন, এডিস মশা নিধনে ভবনের ভেতরে ও বাইরে যেন পানি না জমে। বাসাবাড়ি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন বা চত্বরে মশার বংশবিস্তার সক্ষম পরিবেশ দেখা গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হবে। তিনি আরও বলেন, জমে থাকা পানিতে এডিস মশা সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে। কাজেই বাসাবাড়ি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদ, বাথরুমের কমোডসহ নির্মাণাধীন স্থাপনার বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকলে তা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করতে হবে। সরকারি ভবনগুলোতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ কাজ করবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সভা করেছেন। সিটি করপোরেশনকে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ঢাকার এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পাশর্^বর্তী কলকাতা শহরের মডেল অনুসরণ করে দীর্ঘমেয়াদে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিতে দুই সিটিকে পরামর্শও দেওয়া হয়েছে বলে আমাদের সময়কে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, কলকাতায় এক সময় কারও বাড়িতে এডিসের লার্ভা কিংবা জমানো পানি পেলে মাত্র ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। সে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে গত ১০ বছরে তারা ডেঙ্গুর উপদ্রব শূন্যের কোটায় নিতে পেরেছে। আমাদের এখানে বেশি জরিমানা করা হলে সাধারণ মানুষ সমালোচনায় মুখর হবে। কয়েকটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কলকাতার মেয়র ও বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, সেখানে কোনো এলাকায় ডেঙ্গুর উপস্থিতি পাওয়া গেলে ওই এলাকা লকডাউন করা হয় এবং ওই এলাকার এডিস মশা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফলে এডিস মশা অন্য এলাকায় যেতে পারে না। আমাদের এখানে এক এলাকায় ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানো হলে মশাগুলো অন্য এলাকায় চলে যায়। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসে না। এ জন্য আমরা সিটি করপোরেশনকে কলকাতার এই মডেল অনুসরণ করতে বলেছি। কারণ কলকাতার আলো বাতাস, পরিবেশ ও মানুষের সংস্কৃতি প্রায় আমাদের মতোই। ফলে ওই মডেল এখানেও কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেন, এছাড়া কলকাতাতে যেটা হয় কোনো এলাকায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের র্যাপিড অ্যাকশন চিকিৎসা টিম ওই লোককে হাসপাতালে নেয়। এবং তিনি কীভাবে আক্রান্ত হলেন তার বিবরণ জেনে ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করে নির্মূল করা হয়। এভাবে তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখিয়েছে। কলকাতার মডেল বাংলাদেশে বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশনকে বাধ্য করবে কিনা এমন প্রশ্নে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, মন্ত্রণালয় তাদের পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু ফোর্স (বলপ্রয়োগ) করতে পারে না। ডেঙ্গুর বিস্তাররোধে অবশ্যই আমাদের ধীরে ধীরে ওই মডেলে যেতে হবে। সিনিয়র সচিব বলেন, গত ১, ২১ ও ২৯ এপ্রিল আমরা এ বিষয়ে মিটিং করেছি। এসব মিটিংয়ে এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কও ছিলেন। আগে মশার ওষুধ ঠিকাদারের মাধ্যমে কেনা হতো। ফলে ওষুধ আনতে বিলম্ব হতো। কিন্তু এবার কৃষি মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশনকে কীটনাশক কেনার অনুমোদন দিয়েছে। ফলে তারা সরাসরি বিদেশ থেকে ওষুধ কিনতে পারবে। হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সব সরকারি ভবনে যেন মশা বাসা বাধতে না পারে, সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। গত ১ মে থেকে টেলিভিশনে প্রচার শুরু হয়েছে। কলকাতার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মানুষ সচেতন হলে ডেঙ্গু ৯০ শতাংশ কমে যাবে। বাদবাকি ১০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্ট অর্থাৎ উদ্যোগে কমবে। এটা প্রমাণিত। সুতরাং প্রত্যেক মানুষকেই সচেতন হতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ওয়াসাকেও নির্দেশনা দিয়েছি যেন তাদের অধীন খালগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। বৃষ্টির পানি যেন না জমতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্তের চিকিৎসার বিষয়ে হেলালুদ্দীন বলেন, ডেঙ্গু ও করোনার উপসর্গ প্রায় একই। এজন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে আমরা বলেছি, ডেঙ্গু রোগীকে করোনা রোগী না ভেবে চিকিৎসা থেকে যেন বঞ্চিত করা না হয়। পরীক্ষা করে ডেঙ্গু রোগীকে আলাদা চিকিৎসা দিতে হবে। কোনো রোগী যেন হয়রানির শিকার না হয়। এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনা ও ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুই দফায় ৮৮ কোটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার দুই সিটিকে ৩ কোটি করে ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অচিরেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কিছু নির্দেশনা দেবে। তবে এবার জনসচেতনতাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। সূত্র: আমাদের সময় আর/০৮:১৪/০৯ মে
https://ift.tt/2yxaAKm

Post a Comment

0 Comments