রেলে প্রতিদিন লোকসান সাড়ে ৪ কোটি টাকা

https://ift.tt/eA8V8J
ঢাকা, ০১ সেপ্টেম্বর- করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৪ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ে কিছু পণ্যবাহী ট্রেন চলে। বর্তমানে যাত্রীবাহী যেসব ট্রেন চলছে, সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে আসন ফাঁকা রাখতে হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেনের আসনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হয়, যার পুরোটাই দেওয়া হয় অনলাইনে। এ কারণে কমে গেছে রেলের আয়। ফলে করোনার জেরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেলের আয় কমে গেছে প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা। প্রতিদিন আয় কমেছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। রেলওয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শামসুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, করোনায় ২৫ মার্চ থেকে ট্রেন বন্ধ। ট্রেন বন্ধ থাকায় দিনে সাড়ে ৪ কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে রেল। এখন স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে কিছু ট্রেন চলছে। পর্যায়ক্রমে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। তবে আয় কমছে এটিই সঠিক। বর্তমানে ট্রেনের সব ধরনের টিকিট অনলাইনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। স্টেশনগুলোয় কোনো টিকিট বিক্রি করা হয় না। এতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না ও কিছুটা কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত তারা ট্রেনের টিকিট কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার করোনার কারণে ট্রেনের মোট আসনের অর্ধেক টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে আয়ও কম হচ্ছে। করোনায় ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ৩১ মে প্রথম দফায় আট জোড়া ট্রেন চালু হয়। ৩ জুন দ্বিতীয় দফায় আরও ১১ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেনের চলাচল বাড়ে। তবে কিছু দিন পর যাত্রী সংকটে দুই জোড়া ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২৭ আগস্ট থেকে চালু হয় ১৮ জোড়া। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ১৯ জোড়া ট্রেন রেলের বহরে যুক্ত হবে। করোনায় রেলের যাত্রী, মালামাল পরিবহনের পরিমাণও কমছে। যাত্রী পরিবহনে আয় কমেছে ৩১ শতাংশ। পণ্য পরিবহনে আয় কমেছে ১৬ শতাংশ। তা ছাড়া কনটেইনার পরিবহনে ২০ শতাংশ ও পার্সেল পরিবহনে ৩৩ শতাংশ আয় কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেলওয়ে যাত্রী পরিবহন করে ছয় কোটি ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ২৭ লাখ পাঁচ হাজার। অর্থাৎ করোনার কারণে ট্রেন বন্ধ থাকায় রেলের যাত্রী পরিবহন কমেছে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৪৭ হাজার বা ৩১ দশমিক ২২ শতাংশ। গত অর্থবছরে রেলওয়ে যাত্রী পরিবহন থেকে আয় করে ৭৭০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে রেলওয়ের আয় ছিল ১ হাজার ৩৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ যাত্রী পরিবহন কম হওয়ায় খাতটি থেকে আয় কমেছে প্রায় ২৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরে রেলওয়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এবং জমি ইজারাসহ অন্যান্য খাত মিলিয়ে আয় করে ১ হাজার ২০০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এত কম যাত্রী রেলওয়ে পরিবহন করেনি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেলপথে যাত্রী পরিবহনের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৫৭ হাজার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭ হাজার এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ কোটি ৮ লাখ ৩১ হাজার। রেলওয়ে এর চেয়ে কম যাত্রী পরিবহন করে ৯ বছর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে। সে বছর ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার যাত্রী পরিবহন করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। রেলওয়ে তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেলওয়ের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ হাজার ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর পশ্চিমাঞ্চলের (খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ) লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পূর্বাঞ্চল থেকে রাজস্ব আয় হয় ৬৮৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আর পঞ্চিমাঞ্চল থেকে আয় করে ৪৫৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া টেলিকম খাতের ইজারা থেকে আয় হয় ৬০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে রেলের আয় দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ আয় প্রায় ৪০ শতাংশ কম। আরও পড়ুন: আজ থেকে আগের ভাড়ায় ফিরছে গণপরিবহন এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলওয়ের আয় ছিল এক হাজার ৫৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে রেলের আয় কমেছে ৩৮৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বা ২৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৬২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা সংস্থাটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলওয়ে আয় করে এক হাজার ৩০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় করে ১ হাজার ৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে চার বছরের এবারই রেলের আয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ সূত্র জানায়, রেলে আন্তঃদেশীয়, আন্তঃনগর, মেইল, লোকাল, কমিউটারসহ ৩৬৪টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলে। যাত্রীবাহী ট্রেন দুই মাসের বেশি বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী ট্রেন কিছু দিন পরই চালু করা হয়। এতে করোনার মাঝে আম-লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রেলপথ পরিবহন অব্যাহত থাকায় গত অর্থবছরে এ খাতে আয় হ্রাস পেয়েছে সবচেয়ে কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেলওয়ে পণ্য পরিবহন করে ২ লাখ ছয় হাজার ২১ ওয়াগন। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৯ ওয়াগন। অর্থাৎ করোনার কারণে পণ্য পরিবহন কমেছে ৩৯ হাজার ৭৮ ওয়াগন বা ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে রেলওয়ে পণ্য পরিবহন থেকে আয় করে ২৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে রেলওয়ের আয় ছিল ২৮৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ পণ্য পরিবহন খাত থেকে আয় কমেছে মাত্র ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। যদিও করোনায় ট্রেনে পার্সেল পরিবহন সবচেয়ে বেশি (৩৩ শতাংশ) কমেছে। আর এ খাত থেকে আয় কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় দুই মাস স্থবির থাকায় রেলপথে কনটেইনার পরিবহন কমেছে প্রায় ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ ও খাতটি থেকে আয় কমেছে প্রায় ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এম এন / ০১ সেপ্টেম্বর
https://ift.tt/3lFpP7M

Post a Comment

0 Comments