সাগর তীরে টর্চার সেল

https://ift.tt/eA8V8J
মালয়েশিয়ার সাগর তীরবর্তী এলাকায় রয়েছে জলদস্যুদের একাধিক টর্চার সেল। গহিন বনের মধ্যে গড়ে ওঠা সেসব টর্চার সেলের জলদস্যুদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে দেশটির কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের। উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যেতে চাওয়া অনেকেই মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে বন্দি হচ্ছেন ওই সব টর্চার সেলে। সেখানে মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতনের মুখে প্রাণ হারাচ্ছেন যাদের অনেকে। কেউ কেউ আবার জীবন বাঁচাতে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। একটি মানব পাচার মামলার তদন্তে নেমে র্যাবের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই ভয়াবহ সব তথ্য। র্যাব বলছে, একাধিক মানব পাচারকারী চক্র দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিরীহ মানুষকে বিনা পয়সায় মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলছে। র্যাবের অনুসন্ধানে জানা যায় টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক সংগ্রহ করে প্রথমে চট্টগ্রাম আনে মানব পাচারকারী চক্র। সেখান থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে নিয়ে আসে। টেকনাফ থেকে ধাপে ধাপে তাদের মালয়েশিয়াগামী মাছ ধরার ট্রলারে ওঠায়। এর পরই শুরু হয় তাদের ওপর অমানবিক নিযাতন। টর্চার সেলে আটকে রেখে জিম্মিদের পরিবারের কাছে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। আর টাকা দিতে না পারলে তাদের অনেকেই নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। ২০১৫ সালে করা একটি মানব পাচার মামলার তদন্ত শেষে গত মঙ্গলবার মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭ ও ৮ ধারায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে র্যাব। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সুপার মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, মামলার আসামিরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাধারণ নিরীহ মানুষকে বিনা পয়সায় মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে দেশের দালালের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ করেছে বলে প্রমাণ হয়েছে। এ ধরনের একেকটি চক্রে ১০ থেকে ২০ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক সংগ্রহ করে প্রথমে চট্টগ্রামে নেয়। সেখান থেকে নেয় কক্সবাজারের টেকনাফে। এরপর টেকনাফ থেকে ধাপে ধাপে তাদের মালয়েশিয়াগামী মাছ ধরার ট্রলারে ওঠায়। ট্রলারে ওঠানোর পর থেকেই যাত্রীদের বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। নির্যাতন ও অনাহারে যাত্রীদের মধ্যে কেউ গুরুতর অসুস্থ বা মৃত্যুবরণ করলে তাদের সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জলসীমায় ট্রলার পরিবর্তন করে যাত্রী হস্তান্তর করা হয়। এভাবে মালয়েশিয়া সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছার আগেই জীবিত সব যাত্রী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। র্যাব কর্মকর্তা ফারুকী আরও বলেন, মামলাটির গ্রেপ্তার হওয়া ও পলাতক আসামিরা প্রায়ই সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যাতায়াত করে। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন ও শাহ্ পরীর দ্বীপ এলাকা থেকে মাছ ধরার ট্রলারে ভরে পাচার করা ভিকটিমদের তারাই আবার মালয়েশিয়ায় গিয়ে গ্রহণ করে। এরপর মালয়েশিয়ার সাগর তীরবর্তী গহিন বনে জলদস্যুদের টর্চার সেলে নিয়ে যায় যাত্রীদের। সেখানে আটকে রেখে ভিকটিমদের বাংলাদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার বা ইমোর মাধ্যমে ভিডিও কল করে ভিকটিমদের মারধরের ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করে। যেসব যাত্রী টাকা দিতে অসমর্থ হয় ক্ষেত্রবিশেষে তাদের অনেককেই সাগরে ছুড়ে ফেলে মেরে ফেলে বা শারীরিক নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেয়। এই জলদস্যুদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার কিছু পুলিশেরও সখ্য রয়েছে। তারা দস্যুদের সহায়তা করে থাকে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। গত ২০১৫ সালের ১২ মার্চ র্যাব-১২ এর কাছে ফজলুর রহমান (৩৫) নামে এক ব্যক্তি তার দুই সন্তান জাহাঙ্গীর ও সোহেলকে মালয়েশিয়ায় পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এতে পাচারকারী হিসেবে টাঙ্গাইল মডেল থানার চৌবাড়ীয়া ও ইছাপাড়া গ্রামের রুবেল, শহিদুল, শওকত ও ইউসুফ চট্টগ্রামের আবু মোহাম্মদ ও পিন্টু এবং কক্সবাজারের আনোয়ার, মাহমুদুল ও হামিদুলের নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে ফজলুর রহমান বলেন, সন্তানদের কান্না ও আর্তনাদ শুনিয়ে তাদের জন্য মাথাপিছু ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দাবি করছে জিম্মিকারীরা। টাকা পরিশোধ না করলে তার সন্তানদের সাগরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এরপর তদন্তে নামে র্যাব। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ অভিযান চালিয়ে টাঙ্গাইল থেকে ২ জনকে গ্রেপ্তার করলে তারা চট্টগ্রামে থাকা তাদের অন্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার আসামিদের নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছে আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশে কক্সবাজারের উখিয়ার খুনিয়া পালং এলাকায় জড়ো করা ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরও দুই মানব পাচারকারীকে। এরপর তাদের আরও ২ সহযোগীকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়। মামলার তদন্তে এ পর্যন্ত মোট ১৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এম এন / ০২ জুলাই
https://ift.tt/3dMXmaF

Post a Comment

0 Comments