চট্টগ্রামে করোনার ক্লাস্টার জোন পাহাড়তলী!

https://ift.tt/eA8V8J
চট্টগ্রাম, ১৪ এপ্রিল - বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রতিদিনই করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিধি বাড়ছে। সামাজিক কারণেই যে এমনটা ঘটছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত সাতদিনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থান যাচাই করে দেখা গেছে, তাদের আটজনই নগরের পাহাড়তলী থানা ও আশপাশের বাসিন্দা। এ কারণে চীনের উহান ও নারায়ণগঞ্জের মতোই বন্দরনগরীর প্রবেশমুখের ওই এলাকাটিকে চট্টগ্রামে করোনার ক্লাস্টার জোন মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নগর ও জেলায় শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার, ১৩ এপ্রিল) চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া দুই করোনা রোগীর একজন নগরের পাহাড়তলী থানার সড়াইপাড়া ও অপরজন ওই থানার কাট্টলী এলাকার এলাকার বাসিন্দা। এদের মধ্যে সড়াইপাড়া এলাকায় করোনা আক্রান্ত নারী (৫০) দুপুরে আইশোলসনে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে এক শিশু, এক বৃদ্ধ ও এক নারীর মৃত্যু হলো করোনায়। বুধবার (৮ এপ্রিল) চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হন তিনজন। তাদের একজন ছিলেন পাহাড়তলী থানার সাগরিকা এলাকার বাসিন্দা। বাকি দুইজনের একজন পাহাড়লীর উত্তর পাশের উপজেলা সীতাকুণ্ড ও দক্ষিণ পাশের থানা হালিশহর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় আরও দুইজনকে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়, তাদের একজন ছিলেন পাহাড়তলীর পাশের থানা আকবর শাহ থানার ইস্পাহানী গেট ঝোলারহাট কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা। পরে শনিবার (১১ এপ্রিল) চট্টগ্রামে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট এলাকার দুলালাবাদ এলাকার বাসিন্দা। ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি কয়েক দিন আগে স্থানীয় কাঁচাবাজারে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১২ এপ্রিল) চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ পাঁচজন করোনারোগী শনাক্ত হয়। এদিন পাহাড়লীর পাশের উপজেলা সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় আরও এক করোনা রোগী শনাক্ত হন। অর্থাৎ, ৭ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল এই ৭ দিনে আটজন নারী-পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যারা নগরের পাহাড়তলী ও আশপাশের এলাকায় বসবাস করেন। তাদের মধ্যে এক নারী আজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন। এসব তথ্য চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বির নজরে আনা হলে তিনি বলেন, আপনাদের তথ্য নির্ভুল। আমরাও সেভাবেই হিসেব করছি। মূলত শহরের প্রবেশপথ ও আশপাশের এলাকায় করোনা আক্রান্তের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। আশঙ্কা করছি এটি চট্টগ্রামে করোনার ক্লাস্টার হয়ে উঠছে। আমাদের কাছে এসব তথ্য ও ম্যাপ আছে, দু এক দিনের মধ্যেই হয়তো এটিকে ক্লাস্টার হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ইতোমধ্যে উত্তর কাট্টলীর এগারো পরিবার লকডাউন করা হয়েছে। তিনটি কাছাকাছি এলাকায় করোনা সংক্রমণে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, পাহাড়তলী-কাট্টলী-সাগরিকা এলাকায় করোনা ক্লাস্টার গ্রো করছে বলে ধারণা করছি। তবে সেটা আরও কয়েক দিন দেখতে হবে। যদি এটা হয়ও এর প্রভাব জানতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। যে সবজি বিক্রেতা আক্রান্ত তিনি ভ্যানগাড়িতে করে সবজি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিলেন। তিনি কিভাবে আক্রান্ত হলেন তার কোনো লিংক পাওয়া যায়নি। আমাদের ধারণা, ওই এলাকায় (পাহাড়তলি-কাট্টলী) মানুষের জটলা থেকে ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে। আরও তিনদিন দেখে প্রয়োজনে ওই এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, সারা দেশের ৩৬ জেলায় এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে। রাজধানীর মিরপুর, টোলারবাগ, উত্তরা এবং বাসাবো এলাকা দেশের সবচাইতে বড় চারটি ক্লাস্টার। মোট ৮০৩ জন করোনায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ঢাকার ৪০৭ জনের অধিকাংশ এইসব এলাকার অধিবাসী। ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জে ১৪৪ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ছয়জন। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও তিনজন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৪২ জন। ক্লাস্টার ধরো, কোয়ারেন্টাইন করো: সম্প্রতি ভারত করোনা নিয়ন্ত্রণে নতুন পন্থার কথা জানিয়েছে তাদের রাজ্য সরকারগুলোকে। সেটি হলো, ক্লাস্টার ধরো, কোয়ারেন্টাইন করো। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের নির্দেশিকায় রাজ্যগুলিকে প্রাথমিকভাবে করোনা ক্লাস্টার বা হটস্পট চিহ্নিত করতে বলেছে, যেখান থেকে ছড়াতে পারে সংক্রমণ। সেই ক্লাস্টার চিহ্নিত করার পর নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক কোয়ারেন্টাইনের পথে যেতে বলেছে স্থানীয় প্রশাসনকে। সম্প্রতি আমাদের দেশেও নারায়নগঞ্জ, বরিশাল, লক্ষ্মীপুরের মতো বেশ কয়েকটি জেলাকে ক্লাস্টার চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করেছে। ক্লাস্টার কী? দক্ষিণ কোরিয়ার পেশেন্ট-৩১ চীনের উহান শহর থেকে ফিরেছিলেন কোনো উপসর্গ ছাড়াই। করোনা পজিটিভ আসার আগে দুবার গির্জায় প্রার্থনায় যোগ দেন তিনি। বন্ধুর সঙ্গে হোটেলে খেতেও গিয়েছিলেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি তার করোনা ধরা পড়ে। দেশটির মোট সংক্রমণের ৬০ শতাংশ এর সঙ্গে যোগসূত্র মিলেছে এই নারীরই সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের। এই পেশেন্ট-৩১ এর মতোই কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় (বাজার, হোটেল, হাসপাতাল, উপাসনাস্থল ইত্যাদি) একসঙ্গে থাকা বহু মানুষ নিজের অজান্তেই সংক্রমিত হন করোনাভাইরাসে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার এই ভরকেন্দ্রকেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন ক্লাস্টার। সেখান থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে অন্য শহর, রাজ্য, দেশে। সেই এলাকাগুলিকেই ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একইভাবে চট্টগ্রামে শনাক্ত তৃতীয় করোনা রোগী একজন ব্যাংকার। যিনি দেশের অন্যতম করোনা ক্লাস্টার নারায়ণগঞ্জফেরত। একইভাবে আইইডিসিআর গতকাল জানিয়েছে, নতুন-নতুন যেসব জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জ থেকে সেসব এলাকায় নিয়েছেন। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই দেশের করোনা ক্লাস্টারগুলো চিহ্নিত করে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বাস্তবায়ন করা না গেলে পরবর্তীতে কারোর পক্ষেই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য এখনই জেলা ও শহরগুলোতে প্রাথমিকভাবে এই ধরনের ক্লাস্টার বা হটস্পট চিহ্নিত করতে হবে। পরে সেই ক্লাস্টার চিহ্নিত করার পর নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক কোয়ারেন্টাইন বা লকডাউনের পথে যেতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ১৪ এপ্রিল

Post a Comment

0 Comments